সামাজিক, পারিবারিক এবং এমন এক মানবিক ভূমিকা রয়েছে মাতৃত্বে, যা সন্তান লালন-পালন এবং যত্নের পাশাপাশি, সংবেদনশীলতার বিষয়টিও জড়িত। তাই আমাদের সমাজ আদর্শ মাতৃত্বকে বৈধতা এবং সম্মান দেয়। কারণ মায়েরা কর্মক্ষেত্র ছেড়ে কিংবা কর্মক্ষেত্র সামলেও সন্তান লালন-পালন এবং পরিবারের সবার যত্ন নেন। কিন্তু কথায় আছে, অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়। দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করতে গিয়ে যদি ইমোশনাল অত্যাচার করে ফেলেন সন্তানের উপর, তাহলে তার ফল তো খারাপ হবেই। আর এই সুপার অ্যাক্টিভ বিষয়টি থেকেই হয়তো জন্ম নিয়েছে ‘সুপারমম' শব্দটি। কিন্তু ‘সুপারমম’ হওয়ার বিষয়টিকে ততক্ষণই মান্যতা দেওয়া যায়, যতক্ষণ তা ক্ষতিকারক পর্যায়ে না যায়। এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন মনোশিজ হাসপাতাল-এর কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট প্রজ্ঞা প্রিয়া মণ্ডল।
সুপারমম মানেই ‘সুপারম্যান' ধরনের একটা চরিত্র হবে এমন ধারণা ভুল। তবে আজকাল বেশিরভাগ মায়েদের মুখে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, 'আমার ছেলের (অথবা মেয়ের) সব থেকে ভালো বন্ধু হচ্ছি আমি। আমার সঙ্গে ও সবকিছু শেয়ার করে।' স্কুলের টিচার অথবা পেডিয়াট্রিশিয়ানরা অভিভাবকদের বলেন বাচ্চাদের সবরকম অ্যাকটিভিটি-তে সঙ্গ দেওয়ার জন্যে। কিন্তু সন্তানের সমস্ত কাজে ইন্টারেস্ট নিতে নিতে একসময় দেখা যায় শিশুর ইচ্ছেকে ছাপিয়ে মায়ের ইচ্ছেই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। অভিভাবকদের মধ্যে মায়ের ক্ষেত্রেই এটা বেশি হয়ে থাকে।
মেট্রো শহরের শিক্ষিত মায়েদের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতা চোখে পড়ে। অনেকে তো ভালো চাকরি ছেড়ে বাড়িতে থাকাটা উচিত মনে করেন, সন্তানকে আরও ভালো ভাবে মানুষ করার জন্যে। কেউ কেউ অফিসের কাজ করার ডিসিপ্লিন বাড়িতেও বাচ্চার ঘাড়ে চাপাতে চান। এই ধরনের অভিভাবকরা সর্বক্ষণ বাচ্চার প্রত্যেকটা কাজ নিজের নখদর্পণে রাখতে চান।
মায়ের প্রেজেন্স-এ কুণ্ঠিত হয়ে ওঠে কলকাতার নামি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়ন। ওর মনে হয়, মায়ের এই আচরণে তার ভালো কিছু হচ্ছে না। এটা শুধু টর্চার-এর নামান্তর মাত্র। সকাল থেকে উঠে ক্যালোরি মেপে খাওয়া এবং সারাদিনে তার আর কতটা ক্যালোরি গ্রহণ করা উচিত, তার উপরেও মায়ের ডেইলি লেকচার। স্কুলে আসার সময়ও সঙ্গে মা। ফেরার পথে হোমওয়ার্কগুলো ঝালিয়ে নেওয়া। তবে এইটুকু যা বাঁচোয়া, অন্যান্য অনেক বন্ধুদের মায়েদের মতো মা সারাদিন স্কুলের গেটের বাইরে বসে থাকে না। বাড়ি ফিরে যায়। ঠিক সাড়ে তিনটেয় মা আবার হাজির স্কুলের গেটে। ফেরার পথে সারাদিনের স্কুলের ডিটেলড রিপোর্ট ছেলের মুখ থেকে কীভাবে বার করতে হয়, তা সায়নের মা ভালোই জানেন।