আধুনিক সময়ে মানুষ যত বেশি উচ্চাশাকাঙ্ক্ষী হচ্ছে তত তার আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবও বাড়ছে৷সংযুক্ত পরিবার ভেঙে টুকরো হতে হতে নিউক্লিয়ার পরিবারে এসে থেমেছে৷ সফল হওয়ার খেলায় মেতে মানুষ ভুলে যায়, আসলে সে কতটা একা হয়ে যাচ্ছে৷ এক সময় দেখা যায় তার পাশে আর কেউ নেই৷
একথা অস্বীকার করলে চলবে না, মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার পরিবার। কিন্তু আজকাল পরিবারের মধ্যে এমন পারিবারিক বন্ধন দেখা যায় না।সকলেই যেন এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়৷একই পরিবারে থেকেও পরস্পরের সঙ্গে কথা হয় না৷ যে যার ব্যস্ততায় জীবনযাপন করে৷কারও দুদণ্ড জিরোবার অবকাশ নেই৷ পরস্পর-কে বলার মতো কোনও কথা নেই৷
বর্তমানে পরিবারের বন্ধন ব্যাপকহারে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই কারণেই আমাদের সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে চলেছে দিন দিন। আগে এক সময় একান্নবর্তী পরিবার ছিল যাতে, অসুবিধার তুলনায় সুবিধার দিকটাই ছিল বেশি।সকলেই বিপদে সম্পদে পরস্পরের পাশে দাঁড়াতেন৷ পুজো, নববর্ষ যাপন করতেন একসঙ্গে৷ পারিবারিক খাওয়াদাওয়া, হইহুল্লোড়—সব মিলিয়ে একটা জমজমাট ব্যাপার৷কিন্তু বর্তমানে ছবিটা এর ঠিক উলটো৷
একদিকে যেমন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, তেমনি স্বামী -স্ত্রী তাদের মা বাবাকে ছেড়ে আলাদা বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করছেন। আব্র এখন তো দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ পরিবারে স্বামী-স্ত্রীও মিলেমিশে থাকতে পারছেন না৷ মতবিরোধ আর ইগোর লড়াই শেষ পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদে পরিণত হচ্ছে৷
অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীদের অভিযোগ. স্বামী দীর্ঘক্ষণ কর্মের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীকে বেশি সময় দিতে পারেন না৷ রাগারাগি, ঝগড়া-বিবাদ এসব পরিবারে লেগেই থাকে। এক সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের সম্পর্কের দ্বন্দ্ব লেগে যায়।
আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছি যে, জীবনে সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকতে হলে পরিবারের সুনিবিড় ও দৃঢ় বন্ধন থাকা আবশ্যক।সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সুসঙ্গবদ্ধ পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনে যারা বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পান, তারা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘায়ু হন।যারা পরিবারের মধ্যে মিলেমিশে থাকেন, তাদের রোগব্যাধি কম হয় এবং অন্যদের তুলনায় সুস্থ জীবনযাপন করেন। এসব পরিবারের শিশুরা অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং প্রতিভাবান হয়ে ওঠেন।