আমাদের জীবনশৈলীতে একটা বড়ো পরিবর্তন এসেছে এবং এর প্রভাব পড়ছে সকলেরই জীবনে। সময়ের অভাব, কর্মব্যস্ততা, অফিসের স্ট্রেস, মাল্টিটাস্কিং ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত মানুষ। আর প্রতিনিয়ত এই স্ট্রেস এর শিকার শুধু বড়োরা নয়, বাচ্চারাও এর চাপে ভারাক্রান্ত। তাই হামেশাই দেখা যায় বাচ্চারা খিটখিটে স্বভাবের হয়ে পড়ছে, কোনও কাজ মন দিয়ে করছে না, অলস হয়ে পড়ছে, এমনকী বড়োদের কথাও অমান্য করছে।

ছয় থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে নানারকম পরিবর্তন হয়। শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবেরও নানা পরিবর্তন এই সময় চোখে পড়ে। কিন্তু এই সময়টাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বাচ্চার জীবনে এবং এই পিরিয়ডটাতেই অভিভাবকদের কর্তব্য, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাচ্চাকে জানিয়ে রাখা।

বিশেষ করে চাকুরিরত অভিভাবকদের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ-ই বলা যেতে পারে যে, নিজেদের সন্তানদের সঙ্গে তারা কী ধরনের আচরণ করবেন বা কী শিক্ষা দেবেন তাদের। বিশেষ করে উঠতি বয়সের বাচ্চাদের সঙ্গে ডিল করাটা রীতিমতো একটা আর্ট, যেটা বড়োদেরও রপ্ত  করা খুব জরুরি।

খেলার ছলে শিক্ষা দেবার অভ্যাস

  •  বাচ্চাদের ফান অ্যাক্টিভিটি-তে সহযোগিতা করুন।
  • সব বাচ্চাই অাঁকতে এবং রং নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসে। বন্ধুর মতো এগিয়ে এসে ওদের সাথে রঙের খেলায় মাতুন।
  • বিভিন্ন রং মিশিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবার সাহস দিন বাচ্চাকে। নিজেদের জানা কোনও দুটো রং মেশালে নতুন কী রং সৃষ্টি হয় সেটাও বাচ্চাকে বলুন।
  • নিজেদের শৈশবের স্মৃতি শেয়ার করুন সন্তানের সঙ্গে। সবসময় বলবেন না ছোটোবেলায় সব কাজই আপনি দক্ষতার সঙ্গে করতেন বরং বাচ্চাদের বলুন, ছোটোবেলায় কাজগুলো করতে আপনার অসুবিধাই হতো।
  • বাচ্চাদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান। বাচ্চার পছন্দ, অপছন্দ জানার চেষ্টা করুন।
  • দৈনন্দিন কাজে বাচ্চাকে উপদেশ দেওয়ার আগে নিজের উপর সেটা প্রয়োগ করে, ব্যাপারটাকে বাচ্চার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলুন। যেমন বাইরের গরম থেকে বাড়িতে এসেই ঠান্ডা জল খেলে শরীর খারাপ হবে– এটা শেখাবার আগে নিজেই সেটা বাচ্চার সামনে মেনে চলুন।
  • স্কুলব্যাগ গোছাতে বাচ্চাকে সাহায্য করুন। ছুটির দিনগুলোতে স্কুলব্যাগের কী অবস্থা নিজে চেক করুন। এতে খেলার ছলেই, বাচ্চা স্কুলে গিয়ে ঠিকঠাক শিক্ষায় মন দিচ্ছে কিনা অনেকটাই বুঝতে পারবেন।
  • নিজের পছন্দ বাচ্চার উপর চাপিয়ে দেবেন না বরং বাচ্চার পছন্দ জেনে নিয়ে সেটাতেই মনোযোগ দিন।
  • বাচ্চা দুষ্টুমি করবেই সুতরাং তাকে বকাঝকা না করে বোঝান যে, তার দুষ্টুমির কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, ভালো বা খারাপ। যেমন দুষ্টুমি করে বাচ্চা গাছে চড়লে তাকে বলা উচিত, গাছে চড়াটা সকলেরই জেনে রাখা দরকার কিন্তু গাছ থেকে পড়ে গেলে শরীরে ব্যথা লাগবে সে বিষয়ে সাবধান করতে হবে।
  • কোনও অজানা ব্যক্তির সঙ্গে বার্তালাপ করতে মানা করে রাখুন। সম্ভব হলে বাচ্চার বন্ধুদের সামনেই কথাটার গুরুত্ব বাচ্চাকে বোঝান।
  • ছুটির দিনে সকালে উঠে পার্কে বাচ্চাকে নিয়ে যান। সকালে জগিং, খেলাধুলা করলে শরীর ও মন ভালো থাকবে সেটা বাচ্চাকে বলুন।

গুড এবং ব্যাড টাচ্ সম্পর্কে ধৈর্যের সঙ্গে বোঝান

  •  বাচ্চা সাধারণত জিজ্ঞাসু স্বভাবের হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাড়ন্ত বয়সের বাচ্চারা যখন নিজেদের এবং বড়োদের মধ্যে শারীরিক পার্থক্য লক্ষ্য করা শুরু করে তখন তাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন এসে ভিড় করে।
  • বিশেষ করে ছেলে এবং মেয়েদের শরীরের মধ্যে পার্থক্যটা বেশি করে তাদের চোখে পড়ে।
  • বাচ্চা প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কে প্রশ্ন করা শুরু করলে বোঝাতে হবে যে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে এই পার্থক্য তাদের প্রজনন অঙ্গের জন্য।
  • নিজের শরীর নিয়ে বাচ্চা প্রশ্ন করা শুরু করলে, অঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম বলতে লজ্জা পাবেন না। আপনি না বললে, বাচ্চা বাইরে থেকে অন্য কিছু শিখে আসবে।
  • সাধারণত বাচ্চাকে ভালো বা খারাপ স্পর্শ বোঝানোর সময় হচ্ছে তার ৪ থেকে ৬ বছরের মধ্যে কিন্তু এখন সমসাময়িক ঘটনাক্রমকে মাথায় রেখে দুই-তিন বছর থেকেই বাচ্চাকে এই শিক্ষা দিতে আরম্ভ করে দেওয়া উচিত যখন ধীরে ধীরে তার মধ্যে বুদ্ধির বিকাশ ঘটছে।
  • বাচ্চাকে বোঝাতে হবে বাইরের কাউকে যেন সে নিজের প্রাইভেট পার্টস স্পর্শ করতে না দেয় শুধুমাত্র মা-বাবা ছাড়া।
  • বাইরের কেউ যদি বাচ্চার প্রাইভেট পার্টস-এ হাত দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে বাচ্চাকে কী করতে হবে সেটাও বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...