সুপ্রিম কোর্ট আবারও জানিয়ে দিয়েছে যে, যদি কোনও দম্পতির সন্তান থাকে, তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত, ওই সন্তানের পিতা হিসাবে বিবেচিত হবেন ওই মহিলার স্বামী। এক্ষেত্রে ওই সন্তান যদি অন্য কোনও পুরুষের প্রমাণিতও হয়, তাহলেও তা আইন মাফিক গ্রাহ্য হবে না বিবাহ বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত। আইনি বিষয়টি এমনই যে, আইনি পিতা-মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত, সন্তানকে ‘অবৈধ’ করে তোলা যাবে না। এক্ষেত্রে ওই সন্তান যদি অন্য কোনও পুরুষের হয়, তাহলেও সে তার বৈধ পিতার সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হবে।
এই আইনি ব্যবস্থা বেঠিক নয় এবং নিষ্পাপ সন্তানকে অস্বীকার করা কিংবা তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করাও ঠিক নয়। এখন ডিএনএ পরীক্ষা এতটাই সঠিক যে, সন্তানের আসল পিতা কে, তা যাচাই করে নেওয়া খুব কঠিন নয়। আসলে, অনেক পুরুষ নিছক সন্দেহের বসে স্ত্রী-কে দোষারোপ করেন এবং সন্তান অন্য পুরুষের বলে ঝামেলা করে বিবাহ বিচ্ছেদ চান। তাই, কেউ যাতে আইনের অপপ্রয়োগ না করতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই সত্য-মিথ্যে যাচাইয়ের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বিচারের জন্য এটাই উপযুক্ত মাধ্যম।
আদালতে এমন ভুরিভুরি মামলা চলে, যে সমস্ত মামলায় দেখা যায় যে, স্ত্রী-র সঙ্গে অন্য কোনও পুরুষের সম্পর্ক আছে— এমন অভিযোগ করে মামলা করেছেন স্বামী। এই ধরনের মামলা আসলে খুবই দুঃখজনক। কারণ, এক্ষেত্রে সত্যিটা যাইহোক না কেন, নিষ্পাপ সন্তানকেও এর মাশুল দিতে হয়। তারও ডিএনএ টেস্ট হয় এবং সেই সন্তানের যদি তাকে নিয়ে চলতে থাকা বিবাদের বিষয়টি বোঝার মতো বয়স হয়, তাহলে তার মনে যে চাপ পড়ে কিংবা দুঃখ হয়, তা খুবই মর্মান্তিক।
হিন্দু বিবাহ আইনে সংশোধনের আগে, ‘স্ত্রী-র সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ক আছে এবং সন্তান তার নয়’ —এমন অভিযোগ এনে, সন্তানের দায়দায়িত্ব থেকেও নিজেকে মুক্ত করে নিতেন অনেকে। এর ফলে, 'অবৈধ' ঘোষিত হওয়া ওই সন্তানকে অনাথ আশ্রমে অসহায় ভাবে জীবনযাপন করতে হতো। কিন্তু বর্তমান আইনে কেউ কারওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে, তা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিচার করে সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ রয়েছে। তাই, এখন স্ত্রী-র বিরুদ্ধে 'বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আছে' —এই অভিযোগ এনে সন্তানকে অস্বীকার করা অসম্ভব। অতএব, স্ত্রী-র বিরুদ্ধে স্বামী সত্যি-মিথ্যে যে অভিযোগ এনে মামলা করুন না কেন, আইনি সিদ্ধান্ত তাকে হজম করতেই হবে।





