‘এ দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে, তোড়েঙ্গে দম মাগর তেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে, এ মেরি জিত তেরি জিত, তেরি হার মেরি হার, শুন লে মেরি ইয়ার, তেরা গম মেরা গম, মেরি জান তেরি জান, অ্যায়সা আপনা প্যার’ -এই গানের কথাগুলো আজও আমরা যখন শুনি, তখন মনে প্রশ্ন জাগে, আজকের এই প্রতিযোগিতার ইঁদুরদৌড়ের যুগে এমন বন্ধুত্ব কি সম্ভব? আজ যখন লোকেরা বড়ো বাড়ি, বড়ো ব্যাবসা, বড়ো অ্যাপার্টমেন্ট, বড়ো গাড়ি-র মালিক হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে ব্যস্ত, তখন বন্ধুত্ব তৈরি হওয়ার-ই সুযোগ নেই, তো বিচ্ছেদের প্রশ্ন আসবে কোত্থেকে!
বর্তমানে মানুষে-মানুষে এই যে ভেদাভেদ কিংবা দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি কিন্তু কোনও অলৌকিক সুখ ভোগের পিছনে ছুটে চলার জন্য নয়, এর আসল কারণ লুকিয়ে আছে মুঠোফোনে, টিভি কিংবা কম্পিউটার-এর স্ক্রিন-এ। এখন বন্ধুত্ব আসলে ফেসবুকে কিংবা মোবাইল ক্যামেরা-র গ্যালারিতে জমা থাকে, হৃদয়ে নয়। তাই এই বন্ধুত্ব অস্তিত্বহীন।
৫ শতক আগে আমজনতার অক্ষরজ্ঞান ছিল না, তারা শুধু শুনতো রাজা কিংবা ধর্মের দোকানদারদের কথা। সুযোগ বুঝে বোকা মানুষগুলোর মগজধোলাই করতো ধান্দাবাজরা। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও, সেই যুগের বোকা মানুষগুলোর মধ্যেও বন্ধুত্ব ছিল নির্ভেজাল।
ধর্মীয় ক্ষেত্রেও বোকা বানানোর রীতি প্রচলিত। সব ধর্মেই একই শব্দ ৪-৫ বার উচ্চারণ করতে বলা হয় ভক্তদের। কিন্তু যখন থেকে মুদ্রণ প্রযুক্তি চালু হল, তখন থেকে ছবিটা বদলাতে শুরু করল। একই কথা বারবার উচ্চারণ না করেও, মুদ্রিত শব্দ মস্তিষ্কে স্টোর করা সম্ভব হল। কিন্তু সুবিধাবাদীরা এখানেই থেমে থাকল না। তারা এরপরও সভামঞ্চে বক্তৃতা দিয়ে আবার বাড়তি মগজ ধোলাই করার পথে হাঁটল।
এবার দৃষ্টি ফেরানো যাক নির্বাচনী প্রচারের দিকে। শাসক কিংবা বিরোধী, সমস্ত দলের নেতা-মন্ত্রীদের আশ্বাসবাণীতে ভরিয়ে তোলা হচ্ছে চারিদিক। সবাই এমন ভাবে নিজেদেরকে তুলে ধরছেন, যেন তারা জনগণের প্রকৃত বন্ধু! ভোটদাতাদের মন ভোলানোর জন্য এমন সব শব্দ প্রয়োগ করছেন, যেন তাদের সর্বস্ব নিবেদন করবেন জনগণের পদতলে। অথচ, নির্বাচন ফুরোলেই একেবারে উলটো ছবি দেখা যায়। এই রকম বিষাক্ত পরিবেশে বন্ধুত্ব কীভাবে বেঁচে থাকবে ভাবতে পারেন?