কারওর স্ত্রী আত্মহত্যা করলে তা আলোচনার শীর্ষে থাকে, কিন্তু আত্মহত্যার সঠিক কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হয় না সবসময়। বাস্তব হল এই যে, শুধু অত্যাচারিত স্ত্রী-ই নয়, ঋণগ্রস্তরা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করছেন। চাকরিজীবি থেকে শুরু করে গরিব কৃষক কিংবা শ্রমিক, অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে, অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যাকে ঋণ মুক্তির একমাত্র পথ হিসাবে বেছে নিচ্ছেন।
দিল্লিতে ১২ বছরের ছেলেকে রেখে মা-বাবা আত্মহত্যা করে নিয়েছেন। কারণ করোনা-র পর থেকে ব্যবসায়িক ক্ষতির শিকার হয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না ওই কিশোরের বাবা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কিংবা কোনও ক্রেডিট কার্ড-এর মাধ্যমে টাকা খরচ করে, সেই টাকা সুদে-আসলে ফেরৎ দিতে না পারার জন্য সমস্যার মুখোমুখি হন অনেকেই। কেউ-কেউ আবার আত্মীয়-বন্ধুদের থেকেও টাকা ধার নিয়ে শোধ করতে না পেরে লজ্জায় পড়েন এবং সেই লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য অন্য কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে, বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।
সমস্যার সূত্রপাত হয়, যখন ঋণ নেওয়ার পরও ব্যক্তিগত এবং সাংসারিক খরচে লাগাম লাগাতে পারেন না, যার ফলে ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে। আসলে আয় কমলে কিংবা ব্যবসায়িক ক্ষতির শিকার হলেও, যদি ব্যক্তিগত খরচ কিছুটা কমানো যায় ঋণ নেওয়ার পর, তাহলে হয়তো আর আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় না।
দিল্লিতে ফ্ল্যাটে বসবাসকারী এক দম্পতিকে বিলাসবহুল জীবনযাপনের মাশুল দিতে হয়েছিল। আত্মহত্যা করে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, আত্মহত্যার এক সপ্তাহ আগেও ওই দম্পতির নিজস্ব গাড়ি ছিল, ওরা এক রেস্তোরাঁও খুলেছিলেন। কিন্তু লাগামহীন বিলাসিতার কারণেই সবকিছু হারাতে হয় হঠাৎই।
আসলে ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পারার একাধিক কারণ থাকে। কখনও হয়তো ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে, আবার কখনও নিজেকে উচ্চবিত্ত জাহির করার কারণে, আবার কখনও অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে চাওয়ার কারণে, কখনও আবার পরিবারের সদস্যদের অসীম চাহিদা পূরণ করার কারণে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয় না অনেকের ক্ষেত্রে। মূলত আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারার কারণেই তৈরি হয় অর্থনৈতিক বিপর্যয়। বিজয় মালিয়ার ভরাডুবির পিছনেও ছিল ওই বিলাসিতার কারণ। ললিত মোদীকেও দেশ ছাড়তে হয়েছে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না-পারার জন্য।