হাল সময়ে সমগ্র বিশ্বে সব সমাজেই মহিলারা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে বেরিয়ে এসেছেন ঘর থেকে, সংসার প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে এবং বিশেষ ভাবে যখন তাদের পুরুষ জীবনসঙ্গী সংসারের সম্পূর্ণ প্রয়োজন মেটাতে কোনও কারণে অক্ষম হয়ে পড়েন। এছাড়াও আজ পৃথিবীর বেশিরভাগ মহিলাই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য বিভিন্ন ধারার পেশা, কর্মজীবন বেছে নিচ্ছেন এবং কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকার দাবি করছেন।
বিগত কয়েক দশকে আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যেও এই মানসিকতার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মহিলাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করা তো পুরুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কর্মক্ষেত্রে এই প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা তো আরও কঠিন, কারণ কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার ছিল পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এবং পুরুষের কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে যৌন নির্যাতনের প্রবণতার উৎপত্তি এখান থেকেই।
কর্মরত প্রায় প্রতিটি মহিলাই কোনও না কোনও সময়ে কোনও না কোনও ভাবে এর শিকার হয়েছেন। অবশ্য এই ধরনের আচরণের মাত্রা বিভিন্ন। এই সব শারীরিক, ব্যক্ত, অব্যক্ত অবাঞ্ছিত আচরণের ফলে শুধুমাত্র মহিলাদেরই মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় না, সমগ্র কাজের পরিবেশটাই ভীষণ ভাবে দূষিত, কলুষিত হয়ে পড়ে।
নানা পরীক্ষা, সমীক্ষায় দেখা গেছে কর্মস্থলের যৌন নির্যাতন মূলত দু'ধরনের। প্রথমটিকে ল্যাটিন ভাষায় বলে 'কুইড প্রো কুত্ত’। ইংরেজিতে যাকে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ বলা যায়। অর্থাৎ কিছু পাওয়ার জন্য কিছু দিতে হবে। এক্ষেত্রে একজনকে যৌন আনুকূল্য দেখাতে হবে অন্যজনের কাছ থেকে কর্মক্ষেত্রে অনুকূল ব্যবহার বা সুবিধা পাওয়ার পরিবর্তে। এটি সাধারণত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জাতীয় ব্যক্তির দিক থেকে আসে, যার ফলে মহিলাটির পক্ষে তা অগ্রাহ্য বা প্রত্যাখ্যান করা বেশ কঠিন। এসব ক্ষেত্রে আবার প্রত্যাখ্যান করলে অন্য কর্মগত হয়রানি বাড়ে। তার ফলে অবস্থা আরও কঠিন। পরিস্থিতি ধারণ করে।
দ্বিতীয় ধরনটি আবার উচ্চ পদাধিকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এর মধ্যে জড়িত থাকে এক বিরুদ্ধ-ভাবাপন্ন কর্মপরিবেশ— যেখানে যৌন-প্রকট কথাবার্তা, যৌন-উদ্দীপক ছবি দেখানো, নোংরা ভাষা এবং অযৌক্তিক, অকারণ স্পর্শ জড়িত থাকে। কর্মস্থলে যৌন নির্যাতনের হার দিন দিন বেড়ে চলেছে এবং শুধুমাত্র মহিলারাই নয়, কখনও কখনও পুরুষরাও ছাড় পান না মহিলাদের বা অন্য পুরুষদের হাত থেকে। তবে তার শতকরা হার এতই নগণ্য যে মহিলাদের নির্যাতনের ঘটনাগুলোই মনোযোগের কেন্দ্রস্থলে।