রত্নাবলী ওড়নাটা আর একবার ভালো করে গলায় জড়িয়ে নিল। সকালে মুখ ধোওয়ার সময় ঝাপসা ঘুমচোখে অত নজরে পড়েনি, খাওয়ার টেবিলে ঋষির মিটি মিটি হাসি দেখেই কিছু একটা সন্দেহ হয়েছিল।
– কী দেখছ অমন করে? মুখে ডিম লেগে আছে না কি?
– উঁহু। ঋষির হাসিটা আর একটু চওড়া হয়েছিল।
তখনই সন্দেহ হয়েছিল। টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়েছিল তক্ষুনি রত্নাবলী। আয়নায় তাকাতেই চক্ষুস্থির। গলার ডান দিকে কণ্ঠার হাড়ের নীচটায় বেশ বড়োসড়ো একখানা লাল দাগ। কাল রাত্তিরে ঋষির কাণ্ড। রাগতে গিয়েও হেসে ফেলে রত্নাবলী।
– কী যে করো না। বয়েস দিনদিন কমছে না বাড়ছে?
– এটা তো সরাসর না-ইনসাফি হয়ে গেল ম্যাডামজি, বউকে আদর করার সঙ্গে বয়সের কী সম্পর্ক?
– ফিল্মি ডায়লগ মেরো না তো। রত্নাবলীর চোখে হাসি চিকচিক করে।
– আরে, ডায়লগ কোথায় মারলাম? সত্যি বলছি তো। আমি নব্বই বছর বয়সেও তোমাকে এমনি করেই আদর করব, দেখে নিও। চোখ টেপে ঋষি।
– থাক, হয়েছে। কত ক্ষমতা দেখা যাবে তখন।
– কী মুশকিল, ফিজিক্যালি কিছু করতেই হবে কে বলল, নব্বইয়ে পৌঁছে তো সবই মনে মনে। ঋষি ছাদ ফাটিয়ে হাসে। রত্নাবলী গম্ভীর থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
– তা বলে একটু খেয়াল থাকবে না? অফিস যাব কী করে বলো তো? পুপুর চোখেও তো পড়তে পারে?
– অফিসের লোক তোমার গলার দিকে তাকাবে কেন? আর তাকালেই বা কী? সবার হিংসে হবে তোমায় দেখে।
এ পাগলকে কে বোঝাবে। অগত্যা একটা দোপাট্টাকেই আচ্ছা করে গলায় পেঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে সারাদিন ধরে। মাঝে মাঝেই হাতের আন্দাজে টেনেটুনে দেখে নিচ্ছে রত্নাবলী, জায়গামতো আছে কি না সেটা।
বেশকয়েক বছর হয়ে গেল, বিবাহসূত্রে পুনেতেই বসবাস করছে রত্নাবলীর পরিবার৷ সকাল থেকে আজ কাজের খুব চাপ চলছে রত্নাবলীর, মাথা তোলার সময়ই পাওয়া যাচ্ছে না প্রায়। গোটা পুনে কি আজই ভেঙে পড়েছে লোন নিতে? ব্যাগে রাখা মোবাইলখানা যে কতবার কত বার্তা আসার সংকেত দিয়েছে তার হিসেব নেই। একটা সময় রত্নাবলীকে বাধ্য হয়েই ফোনকে নীরব করে রাখতে হল। বার বার টিংটং, মনঃসংযোগ ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে।