পানমশলাখোর ফিরে এসেছে। বারে বারে কাকু বলছে বলে অস্বস্তি লাগছে সুকুমারের। মাথা দু'দিকে নেড়ে আবার লোকটার থেকে চোখ সরিয়ে নিল।
একটানা দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। অনেকেই সিমেন্টের মেঝের ওপর খবরের কাগজ পেতে বসে পড়েছে। কেউ কেউ লাইন রাখতে বলে দূরের সিঁড়িতে গিয়ে বসেছে। হসপিটাল থেকে বাড়ি খুব দূরে না হওয়ার জন্য হেঁটে আসতে দশ-পনেরো মিনিট লেগেছিল সুকুমারের। ভোররাতে এসেও চোখ ছানাবড়া! এখনই তেইশজন দাঁড়িয়ে পড়েছে। সময় এগিয়েছে, অস্বাভাবিক হারে লোক বেড়েছে। শরীরটা একেবারেই ভালো লাগছে না। এবার মনে হচ্ছে, বাড়ি ফিরে গেলেই হয়। দরকার নেই আর ভ্যাকসিন নিয়ে।
—হেব্বি ঝাড়পিট হবে জানেন তো, মশলাখোর ঠেলে মাস্ক নাকে তুলে বলল।
অন্যমনস্ক ভাবে সুকুমার বলল, 'কীসের!”
—যাঃ বাওয়া! বুঝতে পারছেন না, এত লোকের তো ভ্যাকসিন জুটবেই না কপালে৷
—না পেলে তো ফেরত যেতেই হবে। কী আর করার আছে। কাল এসে আবার লাইন দিতে হবে।
—আর কালকে আব্বার কিচাইন। সবাই এখন ভ্যাকসিন মারতে চাইছে না...।
কথার পিঠে কথা আর টেনে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করল না সুকুমারের। লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল, 'তোমার নাম কী?'
—স্বপন মন্ডল। আসলে গত হপ্তা থেকে সব বয়সের লোককে দেবে বলল না? ভিড়টা এর জন্য বহুত বেড়ে গেছে।
কথা অন্যদিকে যতই ঘোরানোর চেষ্টা করুক সুকুমার, বোঝা যাচ্ছে লোকটা মানে স্বপন এখন এসব নিয়ে কথা বলার মুডেই আছে। নিজের প্রথম ডোজটা নেওয়া হয়ে গেলেই ঠিক করে ফেলেছে, প্রতিমা মানে নিজের বউকেও প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন দিইয়ে নেবে। ছেলেটা সে রকম টাকা পয়সা পাঠায় না, নিজের চব্বিশ বছরের চাকরিটা চলে গেল। না হলে সরকারি হসপিটালে বিনা পয়সায় টিকা নিতে আসত! প্রাইভেটে টাকা খরচ করে ঠিক ব্যবস্থা করে ফেলত। এত ঝক্কি বা ভিড় থাকতই না হয়তো।
তিনজন পিপিই কিট পরে ওয়ার্ড রুমের দরজা খুলে ফেলল। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লোকজন প্রায় হন্তদন্ত হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। পেছন থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠল, আরে একটু দূরে দাঁড়ান না। কখন থেকে বলছি। ঘাড়ের উপর উঠে পড়ছেন তো।