অনুভা বিরক্ত বোধ করছিল। শহরে গাড়ির সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। গাড়ি চালানো দায় হয়ে পড়ছে। আর পার্কিং স্পেস পাওয়া একপ্রকার প্রায় অসম্ভব। হাসপাতালের পার্কিং লট-এও ঘুরে ঘুরে এতক্ষণে গাড়ি পার্ক করতে পারল অনুভা। এত সব কিছু ভাবতে ভাবতে সে হাসপাতালের সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল।
দোতলায় অনুভার বান্ধবী কাম সহকর্মী ভারতী ভর্তি রয়েছে। কিডনির পাথর অপারেশন হয়েছে গতকাল। আজ অনুভা ওকে দেখতে এসেছে।
ভারতীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কেবিনটার চারপাশে চোখ বোলাল অনুভা। ভারতীকে নিয়ে মোট তিনজন পেশেন্ট রয়েছে। একজন তার মধ্যে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলছে, অপরজন চুপচাপ বিছানায় বসে। অনুভার সেদিকে দৃষ্টি পড়তেই খেয়াল করল মহিলাও একদৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওরও চেনা মনে হল। মনে করার চেষ্টা করল অনুভা। মহিলার চোখদুটোও কেমন জানি অস্বাভাবিক উজ্জ্বল হয়ে উঠল অনুভাকে দেখে, যেন বহুদিন পর হঠাৎ করে পরম কোনও আত্মীয়র সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে।
দুজনেই দুজনের মনোভাব পড়ার চেষ্টা করে। হঠাৎ-ই অনুভার বিস্মৃতির পরদা সরে গিয়ে পুরোনো কিছু মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মনে মনে চমকে ওঠে অনুভা। পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় ওই মহিলার বিছানার কাছে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে, ‘নিভা না?’
ম্লান হাসি ফুটে ওঠে মহিলার ঠোঁটে, ‘চিনতে পেরেছ আমাকে?’
‘তুমি এখানে এই অবস্থায়?’ অনুভা কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। এক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার বলল, ‘তোমার কী হয়েছে? আমি তো ভাবতেই পারছি না কোনওদিন তোমাকে এই অবস্থায় দেখতে পাব। কি চেহারা ছিল আর এখন কি চেহারা হয়েছে তোমার। কী করে এমন হল?’
বসে বসে বোধহয় হাঁপিয়ে উঠেছিল নিভা। ক্লান্তিও বোধ করছিল নিশ্চয়ই, অনুভাকে অনুরোধ করল খাটের পিছনের দিকটা উঠিয়ে দিতে যাতে পিঠটা বালিশে এলিয়ে দিতে পারে। ইশারায় অনুভাকে পাশে রাখা চেয়ারটায় বসতে বলল।
‘অনুভা, আমি জানি অনেকগুলো প্রশ্ন তোমার মনে এসে জমা হয়েছে... বুঝতে পারছি না কী করে সবগুলোর উত্তর দেব আর একদিনে এত কথা বলাও যাবে না... হাঁপিয়ে যাই... ফুসফুসের সমস্যা আমার।’