ম্যাটিনি শো শুরু হওয়ার প্রথম বেল বেজে উঠল। শো দেখার জন্য যারা এসেছিল তারা হলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তবু এখনও কিছু মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। হাউস ফুল। অনেকেই এক্সট্রা টিকিটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। শো শুরু হওয়ার মুখে অথচ অজন্তার পাত্তা নেই। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীদের একটা ধিক্কার মিছিল গড়িয়াহাট থেকে বেরোবার কথা। অজন্তা কি সেই মিছিলের জ্যামে আটকে গেছে?

শঙ্খশুভ্র অভ্যাসবশত হজমোলা ক্যান্ডির শেষ অংশটা চিবিয়ে রসাস্বাদন করতেই আবার সেই মেয়েটির সঙ্গে তার দৃষ্টি বিনিময় হয়ে গেল। মনে হল মেয়েটি ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। শঙ্খশুভ্র এবার সত্যি নার্ভাস ফিল করছে। বুকের ভিতর মাদলের বাজনার মতো দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে।

—আপনি কি কাউকে খুঁজছেন? মেয়েটি সরাসরি এগিয়ে এসে জলতরঙ্গের মতো বেজে উঠল।

—কেন বলুন তো? শঙ্খশুভ্রর কণ্ঠে অবাক জিজ্ঞাসা।

—আপনি যদি চান তাহলে আমি আপনাকে সঙ্গ দিতে পারি। মেয়েটি এমন ভাবে ফিস ফিস করে কথাটা বলল যে, শঙ্খশুভ্র ছাড়া আশপাশের অন্য কেউ শুনতেই পেল না। মনের মানুষ যেভাবে কথা বলে অনেকটা সেইরকম।

শঙ্খশুভ্র ছবি আঁকার সরঞ্জামে ভরা কাঁধের শান্তিনিকেতনি ব্যাগটা বাঁ কাঁধ থেকে ডান কাঁধে ঝুলিয়ে মৃদু হেসে বলল, 'ধন্যবাদ। আমার একজন বান্ধবীর আসার কথা। তার জন্য অপেক্ষা করছি।'

—কিন্তু আপনাকে যে আমার ভীষণ প্রয়োজন। জানেন আমার ভীষণ বিপদ।

—বলুন আপনার জন্য আমি কী করতে পারি।

—তাহলে আপনাকে আমার সঙ্গে কষ্ট করে এক জায়গায় যেতে হবে!

শঙ্খশুভ্র-র চরিত্রের একটা বড়ো গুণ কেউ বিপদে পড়ে সাহায্য চাইলে সে না করতে পারে না।

--- বেশ তো চলুন। বলে শঙ্খশুভ্র মন্ত্রমুগ্ধের মতো মেয়েটিকে অনুসরণ করল। এই মুহূর্তে সে যেন নিজের প্রতি সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। তার নিজস্ব শক্তি বলতে এখন কিছুই নেই। কোনও এক অজানা নারীশক্তি যেন কপালকুণ্ডলার মতো তাকে টেনে নিয়ে চলেছে৷ কোন গন্তব্যে সে চলেছে জানে না। জাহান্নামে নিয়ে গেলেও এখন তার কিছুই করার নেই। শঙ্খশুভ্রর নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের হয়তো আজই হল প্রথম পদস্খলন। তেইশ বছর বয়সটা বড়ো সাংঘাতিক। কোনও বিপদের তোয়াক্কা করে না।

—এই চাপা পড়ে যাবেন যে। বলে মেয়েটি একান্ত আপনজনের মতো শঙ্খশুভ্রর হাত ধরে দাঁড়িয়ে পড়ল চৌরঙ্গীর জেব্রা ক্রসিংয়ের উপর। একটা মিনিবাস দ্রুত গতিতে বুনো জানোয়ারের মতো গর্জন করে লেনিন সরণির দিকে ছুটে গেল।

শঙ্খশুভ্র একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। সম্বিত ফিরে আসতে বুঝতে পারল সে এক অচেনা মেয়ের পথের সঙ্গী হয়েছে। শুধু তাই নয়, সে অবাক বিস্ময়ে দেখল তার একটা হাত মেয়েটির গোলাপি নেলপালিস-রঞ্জিত নরম উষ্ণ হাতে সমর্পিত। বাইরের লোক ওদের এই অবস্থায় দেখলে ভাববে বুঝি প্রেমিক-প্রেমিকা। নিজেকে প্রেমিক ভাবতেই শঙ্খশুভ্রর হাসি পেল। এখন প্রেম করার তার সময় নেই। এইচএস পাস করতেই ঘোড়দৌড়ের মতো তার জীবন শুরু হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে বেলা বাড়তে না বাড়তেই নাকে মুখে গুঁজে দমদমের গরুহাটা থেকে অটো করে ট্রেন ধরার জন্য ছুটতে হয় দমদম স্টেশনে। শিয়ালদায় নেমেই বাসে বাদুড় ঝোলা হয়ে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ। সেখান থেকে সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরেই ছুটতে হয় ‘অংকিতা আর্ট একাডেমি’-তে ছাত্রছাত্রীদের অংকন শেখাতে। তার পর আছে প্রাইভেট টিউশন।

রবিবার একটা দিন আর্ট কলেজ ছুটি থাকলেও তার রেহাই নেই। সেদিনও বাড়িতে প্রায় দুশো ছেলেমেয়ে আসে আঁকা শিখতে। কাজেই প্রেম করার তার ফুরসত কোথায়। অজন্তার সঙ্গে আর্ট কলেজে এক বছর মিশছে। একদিনও সময় করে নিভৃতে কোথাও বসা হয়নি। অজন্তার কথাতেই সে আজ প্যারাডাইসে ‘লোহা’ দেখবে বলে এসেছিল। তাও দেখা কপালে জুটল না। কোথাকার কোন এক কপালকুণ্ডলার ডাকে তাকে ছুটতে হচ্ছে প্রয়োজনের তাগিদে।

--- এই আমার দারুণ খিদে পেয়েছে, ফুচকা খাওয়াবেন? মেয়েটি তার হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে ছেলেমানুষের মতো বলে উঠল। কথাটা শুনে শঙ্খশুভ্র তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মনে হল মেয়েটি যেন তার পুরুষাকারকে গ্রাস করেছে। একবার ভাবল মেয়েটি কি খারাপ? যদি তাকে ব্ল্যাকমেল করে। এক মিনিটের আলাপে সে যেভাবে শঙ্খশুভ্রর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে চাইছে সন্দেহটা স্বাভাবিক। কথায় বলে পথে নারী বিবর্জিতা। তবু মেয়েটির কাজল কালো টানা চোখের দিকে তাকালে নিষ্পাপ বলে মনে হয়। মনে হয় এই পৃথিবীর কোনও পাপই যেন তাকে স্পর্শ করেনি। এটা কি শঙ্খশুভ্রর ঘোর লাগা চোখের দোষ না মনের ভুল? বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, অচেনা মেয়েমানুষ ছুঁলে যে কত ঘা খেতে হবে তা কে জানে। তাছাড়া যার বিপদ তার ফুচকা খাওয়ার কথা মনে আসে কী করে।

आगे की कहानी पढ़ने के लिए सब्सक्राइब करें

ডিজিটাল

(1 साल)
USD10
 
সাবস্ক্রাইব করুন

ডিজিটাল + 12 প্রিন্ট ম্যাগাজিন

(1 साल)
USD79
 
সাবস্ক্রাইব করুন
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...