পর্ব - ৮
রেড রোডে বরাবরই গাড়ির গতি বেশি থাকে।
কার টেপে রবীন্দ্রসংগীত বাজছিল। জানি, রণিদা রবীন্দ্রসংগীতের একনিষ্ঠ ভক্ত হলেও এ সময় ও গান শুনছে না, জটিল অঙ্কের সমাধানে ব্যস্ত।
গানটা ওর মস্তিষ্কে অনুভূত হচ্ছে অন্যভাবে, এক অপার্থিব আবহ সৃষ্টিতে যা ওকে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য ভাবনাচিন্তা দূরে ঠেলে দিয়ে মনকে একাগ্র করতে সাহায্য করছে। ওর এইরকম আচরণ আমার সুপরিচিত।
আমি এখনও মূকাভিনয় করে যাচ্ছি।
আচমকা রণিদার মোবাইলটা যান্ত্রিক সুরে গেয়ে ওঠে– ‘আমার বেলা যে যায় সাঁঝ বেলাতে...’
নমস্কার, রাতুলবাবু, বলুন কী খবর?
ওর কণ্ঠস্বরে বুঝতে পারি চমকপ্রদ কিছু ঘটেছে।
বলেন কী? এরই মধ্যে আসামি অ্যারেস্টও হয়ে গেল? নাহ্, মনে হচ্ছে এ যাত্রা আমার পরিশ্রমটা বৃথাই গেল। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এক্ষুনি আসছি আমি। আপনার কাছাকাছিই আছি এখন। ওকে, ধন্যবাদ।
ফোন রেখে রণিদা ড্রাইভ করতে করতে আমাকে বলে, দারুণ খবর রঞ্জন, ঘনশ্যাম মণ্ডলের খুনি ধরা পড়েছে।
সে কী?
হ্যাঁ, ঠিকই বলছি, হাসে রণিদা।
আমি অবাক, রণিদা এভাবে হেরে গেল। এ তো প্রায় অসম্ভব। কোনও মতে ঢোঁক গিলে বললাম, কে সেই খুনি?
কেন, রাধেশ্যাম মণ্ডল।
মানে ঘনশ্যাম মণ্ডলের ভাই।
এগ্জ্যাক্টলি, তবে এটা পুলিশের ধারণা।
ওকে কোথায় পেল পুলিশ?
গতকাল রাতে ও নাকি বাড়ি ফিরে আসে। ঘনশ্যামবাবুর স্ত্রী ব্যাপারটা ফোন করে থানায় জানান। পুলিশ ওকে রাতেই বাড়ি থেকে অ্যারেস্ট করে তুলে নিয়ে আসে।
তারপর?
তারপর আর কী, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওর জবাব না কি স্যাটিসফ্যাক্টরি ছিল না। আজ সকালে কোর্টে পেশ করে পুলিশ রিমান্ডের প্রেয়ার দেয়।
নিশ্চয়ই কোর্টও সেটা মঞ্জুর করেছে?
অবশ্যই।
তা হলে আমরা এখন ময়দান থানায় যাচ্ছি?
ঠিকই বলেছিস, জবাব দিল রণিদা।
বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম ক্রস করছিল তখন আমাদের গাড়ি। কিছু সময়ের মধ্যেই ময়দান থানায় পৌঁছোলাম।
থানায় প্রবেশ করে ইনভেস্টিগেটরস রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম রণিদা আর আমি। ঘরে ঢুকতেই আইও রাতুল রায় বলে উঠলেন, গুড আফটারনুন মি. চক্রবর্তী।
গুড আফটারনুন মি. রায়, রণিদা প্রত্যুত্তর দেয়, আমি হাসি।