ফোনের রিসিভারটা কান থেকে নামিয়ে রেখে আমার দিকে সংক্ষিপ্ত দৃষ্টিপাত করেই কমলাক্ষ বলল, ‘তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও, আর্জেন্ট।'
ভূমিকাবিহীন এমন নির্দেশ যদিও আমার কাছে নতুন কিছু নয়, তবুও এক স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্নটি আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে এল, ‘ব্যাপারটা কী একটু খুলে বলবে?'
—ইন্সপেক্টর দিগম্বর মল্লিকের ফোন। খুন। মনোময় বাগচী।
স্বল্প শব্দ ব্যয় করে মানুষকে কতটা বিহ্বল করে তোলা যায় সে শিল্প কমলাক্ষের নখদর্পণে। কৌতূহল যে আমার মধ্যে শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে এক মহীরুহের রূপ নিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কমলাক্ষ ইতিমধ্যেই নিজের গায়ের উপর একটি সাদা পাঞ্জাবি চড়িয়ে তৈরি হয়ে নিয়েছে দেখে, আমিও তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
ট্যাক্সির ড্রাইভারকে কমলাক্ষ ‘১৩/বি মিত্র লেন' ঠিকানার নির্দেশ দিতেই বুঝলাম আমাদের আপাতত গন্তব্য বরাহনগর থানা নয়, বরং সদ্য খুন হওয়া মনোময় বাগচীর বাড়ি। ট্যাক্সির পেছনের সিটে দু'জনে পাশাপাশি বসলাম। কমলাক্ষের মুখের উপর এই ঝলমলে দিনেও যেন আঁধার নেমে এসেছে। মিনিটখানেক অপেক্ষা করার পরেও যখন কমলাক্ষ আমার কৌতূহল প্রশমনের সামান্যতম চেষ্টাও করল না, তখন নিজেই উদ্যোগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম— 'এই মনোময় বাগচীটা কে? আগে কখনও এই নাম শুনেছি বলে তো মনে পড়ছে না!'
দেশলাই ঠুকে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে কমলাক্ষ বলল, “পরশু বিকেলে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। তুমি গিয়েছিলে কৃষ্ণনগর, তোমার পৈত্রিক বাড়িতে। তাই তুমি এসবের কিছুই জানো না।”
—কিন্তু আমি তো কাল রাতেই ফিরেছি। এই ব্যাপারে তো কিছুই....
কথাটা শেষ করতে না দিয়েই কমলাক্ষ বলল, 'সেই প্রথম সাক্ষাতে আজকের পরিণতির বিন্দুমাত্র আভাস আমি পাইনি।' স্পিডোমিটারের কাঁটা চল্লিশের ঘরে রেখে বিটি রোড ধরে ট্যাক্সি ছুটল প্রায় মিনিট পনেরো। এই সময়টুকুতে কমলাক্ষের মুখে পূর্বঘটনার যা বিবরণ পেলাম তা হল এই যে, মনোময়বাবু ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার। পয়সাওয়ালা ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রী গত হয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। একটি পুত্র সন্তান, নাম অখিলেশ। বয়স পঁয়ত্রিশ। কলেজের ডিগ্রি আছে, ব্যস ওইটুকুই। কাজ কর্মের প্রতি কোনও আগ্রহ তো নেই-ই, উপরন্তু কিছু বদগুণ জুটিয়ে বসেছে। আর এগুলির মধ্যে সবথেকে সাম্প্রতিকতমটি হল, গ্যাম্বলিং, অর্থাৎ জুয়া।