( ৯ )
আমাদের রবীন্দ্রজয়ন্তী হয়নি। ঠিকমতো ব্যবস্থা করা হয়ে উঠল না। হঠাৎ করেই অমিতার বিয়ে হল। কিছুটা কথা চালাচালি। তারপর সব চুপচাপ। এমনকী সমরকাকুও।
কী দ্রুত দিন কাটে। গরম চলে গিয়ে আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে বেড়ায় আকাশে আকাশে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে। সবাই মন্দিরে উঠে দাঁড়িয়ে থাকি। রাইমা মন্দিরের সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জলে নাচের মুদ্রায় বাঁ হাতটা নাড়াতে নাড়াতে গায় ছায়া ঘনাইছে বনে বনে, গগনে গগনে ডাকে দেয়া...
আমরা সব্বাই সুরের মূর্ছনায় বৃষ্টির সঙ্গে মিশে যাই। আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামে। গাছের পাতা দোলে। ব্যাং লাফায়। পতঙ্গেরা আপনমনে উড়ে বেড়ায়। নিম গাছের ডালে পাখি ডানা ঝাপটায়। সেদিন সন্ধ্যায় অনেকদিন পর কবিতার খাতাটার পাতায় লিখলাম
বৃষ্টির সুর ভেসে বেড়ায় গাছের পাতায় পাতায়/ মনের ডানায় ডানায় মন্দিরের কুঠুরিতে কুঠুরিতে।/ বনের মাঝে এই ভাঙা মন্দিরে/ কোনও পুরোহিত থাকে না।/
সন্ধ্যা-প্রদীপ জ্বালে না কেউ।/ রাত্রি গভীর হলে/ সত্তর দশকে মৃতবিপ্লবীদের ছায়া পাহারা দেয়/ এই পরিত্যক্ত মন্দির।
খাতাটা সরিয়ে রেখে ইংরাজি টেক্সট বইটা টেনে নিই। তখনই শুরু হল হাঁচি, আর হাঁচি। ঠাম্মা কপালে হাত দিয়ে বলল, হ্যাঁ। যা ভেবেছি তাই। জ্বর এসেছে।
মা রান্নাঘর থেকে বলল, বৃষ্টিতে অত ভিজলে জ্বর হবে না!
ঠাম্মা বলল, যাও শুয়ে পড়ো। আমি বাবুল ডাক্তারকে বলে কটা পুরিয়া নিয়ে আসি।
ঠাম্মা বেরিয়ে গেলে মা আমায় শুইয়ে একটা চাদর চাপা দিয়ে বলল, ঘুমোও। খাবার সময় ডাকব।
গভীর রাতে স্বপ্নে এল ডলি। আমার মাথায় নরম হাত বুলিয়ে বলল, জ্বর এসেছে।
হ্যাঁ
কত?
জানি না। মা জানে।
তুই ঘুমো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
ঘুমটা আমার ভেঙে গেল।
মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে মা বলল, জ্বরটা বেড়েছে। আর একটা পুরিয়া খেয়ে নাও। মা পুরিয়া খুলে আমার মুখে ওষুধ ঢেলে দেয়।
( ১০ )
দুদিনেও আমার জ্বর ছাড়ল না।
ঠাম্মা বলল, ও হোমোপ্যাথির কাজ নয় বউমা, আলোপ্যাথ দেখাও।