( ১১ )
আমরা এখন অন্য আকাশ খুঁজে বেড়াই। অন্য ভুবন। বাসব অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মেশে। স্কুলের দু'তিনজন বন্ধু আর ওদের চারজন বন্ধু নিয়ে আমার অন্য গ্রুপ। সারা শহর ঘুরে বেড়াই। সাইকেলে চড়ে গ্রামের দিকে চলে যাই। সেখানে গিয়ে চুপি চুপি আম জাম পেড়ে খাই। শহরের ব্যস্ততা এখানে নেই। চারপাশ নিঝুম, নিস্তব্ধ।
বাঁশের বেঞ্চে বসে গোয়ালাদের সাইকেলে বালতি ঝুলিয়ে ছানা নিয়ে যাওয়া দেখি। ধুলো ওড়া পথ দেখি। চারপাশ সবুজে সবুজ। প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিই। রাত্রে ডায়ারিটা টেনে নিয়ে লিখি—
ওই যে দূরের বিস্তৃত শ্যামলিমা
সে যে তুমি
ওই যে দূরে ধুলো মাটির পথে
আবছায়া যে দাঁড়িয়ে সে যে তুমি
কালো মেঘের আড়ালে যে হরিণী ছুটে যায়
সে যে তুমি
ছাতিম গাছের নীচে পড়ে...আছে
আমাদের অপূর্ণ স্বপ্ন
একদিন রঙিন মাছের পিঠে চড়ে
পূর্ণ করে আসব-হে জীবন!
একদিন দুপুরবেলায় ঠা ঠা রোদে ডলি এল আমাদের বাড়ি ছাতা মাথায়। ঘেমে নেয়ে একসা। ওড়নাতে মুখ মুছতে মুছতে বলল, শুয়ে ছিলাম। ভালো লাগছিল না। তোকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছা করছিল।
তাই চলে এলি?
রাগ করলি?
ওর হাত টেনে সিঁড়ি থেকে বারান্দায় তুলে বলি, একদম না।
খিলখিল করে হেসে ওঠে ডলি। ওর পেছনে আম গাছের ডালে বসে একটা কাক ক্রমাগত ডেকে চলেছে। নিথর গাছের পাতা। একটু বৃষ্টি না হলে মানুষ মরে যাবে। এই রোদ্দুরে পথে সাইকেলের ক্রিং ক্রিং বা রিকশার প্যাঁক প্যাক শব্দও নেই। শুধু গরম হলকা বয়ে যাচ্ছে।
পড়ার ঘরে ঢুকে ফ্যানটা চালিয়ে চেয়ারে বসলাম। ফ্যানের গম গম শব্দে ঘরটা ভরে ওঠে। যত না জোরে ঘোরে শব্দ হয় তার থেকে অনেক বেশি।
আমার বিছানায় পা তুলে বসে এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে ডলি প্রশ্ন করল, তুই এখানে ঘুমোস?
যেদিন মন ভালো থাকে সেদিন এখানে শুই। মন খারাপ থাকলে মায়ের কাছে।
ও উঠে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরে ভেজা কপাল আমার কপালে ঠেকিয়ে বলে, তোর মন খারাপ হয়? কেন? আমার জন্য নাকি অন্য কেউ?