( ১৫ )
চার মাসের মধ্যেই কলেজে আমার বেশ নাম হয়ে গেল। এক দিন ইংরাজি ডিপার্টমেন্টের হেড এসডি আমাকে বললেন, বেশ ভালোই তো পড়াচ্ছ শুনছি। এবার পিএইচডি-টা করে নাও।
আপনি যদি স্যার একটু হেল্প করেন তবে আপনার আন্ডারে...
আমার কাঁধটা বাঁ হাতে ঝাঁকিয়ে এসডি বললেন, ঠিক আছে, তাই হবে।
স্বপ্নটা আমার বহু দিনের। খুশিতে বারবার তাঁকে থ্যাংকস জানিয়ে যখন বাড়ি ফিরলাম, তখন শীতের বিকেল বিদায়ের জন্য প্রস্তুত।
খোলা বারান্দায় বসে ঠাম্মা আর মা গল্প করছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলাম ঠাম্মা বলছে, দ্যাখো বউমা, পিকুন ঠিক বাবার মতোই হয়েছে। লম্বা চেহারা, চওড়া কাঁধ। ব্যাটা ছেলে তো এরকমই হবে।
মা বলল, লক্ষ্য করেছেন মা, কেমন বয়স্কদের মতো ব্যাক ব্রাশ করে চুল আঁচড়ায়?
আমি বললাম, ঠিক আছে, রবিবারই চুলের স্টাইল পালটে খোকা হয়ে যাব।
মা চা করতে গেল। ঠাম্মার পাশে মায়ের চেয়ারটায় বসলাম। ঠাম্মার হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। গোল গোল হাতে কেমন শিরা ফুটে উঠেছে।
ঠাম্মা বুঝতে পেরে বলল, হবে না। বয়স কত হল?
ডাক্তার দেখিয়ে তোমাকে এবার ভিটামিন ওষুধ এনে দেব।
আচ্ছা আচ্ছা। সব হবে। পোশাক ছেড়ে হাত ধুয়ে নে। সেই কখন বেরিয়েছিস।
আমি পোশাক পালটাতে যাই।
হাত মুখ ধুতে ধুতে ঠিক করে ফেললাম পোস্ট মর্ডান পোয়েট্রি নিয়ে আমার পেপারস রেডি করব। চা খেতে খেতে এসডিকে ফোন করলাম। উনি খুশি হলেন।
ঠাম্মার সঙ্গে চা খেতে খেতে সন্ধ্যা শুরুর আকাশ লাল হয়ে উঠল। আমাদের ছোট্ট আমগাছটায় পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ। কয়েটা বাদলে পোকা বারান্দায় ওড়াউড়ি করছে। রাস্তা দিয়ে যে কত লোক যাচ্ছে! বাইক যাচ্ছে। রিকশা যাচ্ছে। এই পথটার গুরুত্ব আজকাল অনেক বেড়ে গেছে। বহু রাতেও বাইক কিংবা সাইকেলের শব্দ শোনা যায়। মা ঠাম্মাকে একটা চাদর দিয়ে গেল।
ঠাম্মা বলল, গায়ে কিছু দে। শুধু পাঞ্জাবি পরে থাকলে হবে? ঠান্ডা লাগবে।