অনেকদিন পর অনন্যা যখন সার্থকের এরকম আচরণের কারণটা জানতে পারল, ও মনে মনে খুব দুঃখিত বোধ করল। সার্থকের জন্য মনের কোণায় সহানুভূতি জন্ম নিল। দু’বছর আগে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে সার্থক স্ত্রীকে হারিয়েছে। পাঁচ বছরের ওদের একটি সন্তান আছে। দ্বিতীয়বার সার্থক আর বিয়ে করেনি কারণ সৎমা সম্পর্কে খুব একটা ভালো ধারণা সার্থকের নেই। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়েই সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকে সার্থক।
এতটা শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা থাকতেও সার্থক যে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎকে অগ্রাধিকার দেয়, এটা ভেবেও ভালো লাগল অনন্যার।
একদিন লাঞ্চ টাইমে অনন্যাকে ক্যান্টিনে বসে খেতে দেখে সার্থক মনের মধ্যে ওঠা একটা প্রশ্ন না করে পারল না, “আচ্ছা অনন্যা, নিজের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পুণার মতো একেবারে অচেনা একটা শহরে বদলি নিলে কেন?”
—কারণ, ওটা শুধু চারটে দেয়ালযুক্ত একটা বাড়িই, আর হ্যাঁ মাথায় একটা ছাদ আছে এইপর্যন্ত! আনমনা হয়ে উত্তর দিল অনন্যা।
—মানে? সার্থক অনন্যার উত্তরের মানেটা ঠিক বোধগম্য করতে পারল না।
—বাড়িতে ভাই বোনেদের মধ্যে আমি সবথেকে বড়ো। বাবার হঠাৎ মৃত্যুর পর বাড়িতে রোজগার করার মতো কেউ ছিল না। ভাই বোনেরা পড়াশোনা করছিল। বাবার জায়গায় আমাকে কোম্পানি বহাল করে কারণ বাবার বস বাবাকে খুব শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসতেন। সংসারে অবশ্য আর্থিক অনটন কিছু ছিল না।
আমার মাইনেতে ভালো ভাবেই সংসারটা চলছিল। ভাই বোনের পড়াশুনোও বন্ধ হয়নি। কিন্তু বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। বিয়ে করে নিলে বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যেত আর ভাই বোনের কেরিয়ারটাও নষ্ট হয়ে যেত। উলটে অন্য আর একটা বিপদের সম্মুখীন হতে হতো।
একবার একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছিল। পাত্রপক্ষকে খুব সাহস করে একটা শর্ত দিয়েছিলাম — বিয়ের পর আমার মাসমাইনের অর্ধেক আমি নিজের বাড়িতে দেব। ব্যস, ওদের আগ্রহ ওখানেই শেষ। এরপর আর ওই শর্ত কারও সামনে রাখার সাহস হয়নি। আমার কাছে আমার ভাই বোন বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমিই ওদের আশা-ভরসা ছিলাম। নিজের জীবন নিয়ে আমি খুব খুশি ছিলাম। ওদের পড়াশোনা শেষ হলে, নিজেদের কেরিয়ারে ওরা প্রতিষ্ঠিত হলে যতটা সম্ভব ধূমধাম করে ওদের বিয়ে দিই। মা-ও বোধহয় ওটার জন্যই বেঁচে ছিলেন। এরপর মা-ও মারা যান।