অনেক মানুষ জীবনে ভুল করে থাকে, তা হয়তো পরে তার অনুতাপের কারণ হয়। রহমান সামান্য ফুর্তি আর আনন্দ পাওয়ার জন্য যে ভুল করেছিল তা যেন কেউ কোনও দিন না করে।
হাসানপুরের রহমান আর দীপক ছোটোবেলা থেকেই অন্তরঙ্গ বন্ধু। একই বছরে গ্রামের স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অনার্স-সহ একজন বিএ অন্যজন বিএসসি পাশ করে। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রহমান এমএ পাশ করে একটি গ্রামের স্কুলে মাস্টারি পায়, আর দীপক এমএসসি করে কলকাতার এক নামি কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হয়।
দীপকের মা শান্তাদেবী রহমানকে রমেন বলেই ডাকেন। মায়ের কথামতো দীপকও তাই। শান্তাদেবী রমেনকে নিজের ছেলের মতোই দেখেন। জাতপাতের বিচার তাঁর নেই।
দুই অন্তরঙ্গ বন্ধুতে বেশ কিছুদিন দেখা-সাক্ষাৎ নেই। মোবাইল থাকলেও পত্র লেখাতেই এদের বেশি আনন্দ। রহমানের প্রতি পত্রেই থাকে ওর ওখানে বেড়াতে যাওয়ার আমন্ত্রণ। দীপকেরও মাঝে মাঝে কলকাতার গণ্ডিবদ্ধ জীবনধারার বাইরে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কাজের চাপে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
এবার রহমান লিখেছে, ‘কলকাতার বাবু, বড়োদিনের ছুটিতে না এলে আর পত্র লিখব না। মোবাইলও বন্ধ করে রাখব।’ আগত্যা দীপককে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
স্টেশনে রহমান নিজে উপস্থিত ছিল। দু’বন্ধুতে দু’বছর পর দেখা। রাত ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া শেষে একই বিছানায় আশ্রয় নেয়। সারারাত গল্পের পর ভোরের দিকে দুজনেই গভীর ঘুমে জড়িয়ে পড়ে।
– বাবু আপনার প্রাইভেটের ছাত্রছাত্রীরা এসে পড়েছে। সাতটা বাজে। চাকর রামু দরজায় ধাক্বা দিতে দিতে বলে।
রমেন তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে, দীপক তখনও অঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন।
প্রাইভেট পড়ানো প্রায় শেষ হওয়ার মুখে দীপক রমেনকে ডাক দেয়।
– বাবু পড়াতে বসেছে, আপনি মুখ হাত ধুয়ে নেন। চা-জলখাবার রেডি, বাবুরও ততক্ষণে পড়ানো শেষ হয়ে যাবে। রামু এসে জানায়।
– রমেন প্রাইভেট পড়ায় নাকি?
– হ্যাঁ, এখানের সব মাস্টারবাবুরাই তো পড়ায়।