—কী রে এখানে কী করছিস? কাঁধে হাত রাখে দিদি।
আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। দিদির বুকের ওপরেই আছড়ে পড়ে। ঝুপঝুপিয়ে চোখ ছাপিয়ে নেমে আসে কান্না।
—কী হল বলবি তো? তোর এই কথায় কথায় কান্না ভালো লাগে না আমার। উফ এত ছিঁচকাঁদুনে।
—দিদি...।
—আরে এই তো বসে ছিলিস? বুঝতেই তো পারছি না আমি। পরীক্ষার কোনও খাতা বেরিয়েছে? আবার গাড্ডা খেয়েছিস? আমার নয় তোর বিযোই আগে দিতে হবে। আর উপায় নেই। বাপিকে তাই বলব। তোর যা হাল দেখছি। বেকার টাকাপয়সা খরচা হচ্ছে। ওকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে যায় পায়ে।
—বাবু কী হল রে? দুইবোনে এখানে গল্প করছিস? কত সাধ্য সাধনা করে জেনারেটার চালাল মানুষটা। যা যা পড়তে বস। ঘরের সুইচগুলো ঠিকঠাক জ্বলছে কিনা দেখতে দেখতে বলেন কস্তুরীর মা।
—আর বোলো না। তোমার ছোটো মেয়ে কীর্তি। আবার নিশ্চয়ই কিছু ঘটিয়েছেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল।
—সে আবার কী?
—হ্যাঁ নাহলে আর বলছি কী?
—কতবার তোর বাবা বলে দিদির কাছে পড়তে ইচ্ছে না হয়, ছেলেটার কাছে তো পড়তে পারিস। দাদার মতো ভালোবাসে তোকে। ইংলিশটাও দারুণ শিখবি। যখন বাড়িতে আসছেই সে। একবার যেগুলো বুঝতে পারছিস না, দেখে নিতে কী হয়?
—কী আবার? সেই সময়টায় টিভিতে হিন্দিগান দেখে কাটাবে। ও পড়বে ঋজুর কাছে? তাহলেই হয়েছে? জানো মা। এই তো আমার সাথে দেখা করে গিয়ে একহাতে অফিসের কাজ, আবার ছাত্রদের পড়ানো। ও যা সাংঘাতিক খাটে চিন্তা করতে পারবে না।
—জানি রে। ওর কথাতেই বোঝা যায়। ও কতটা পরিশ্রমী।
আর কী বোঝা যায় কস্তুরী জানে না। হঠাত্ করেই খুব শীত করছিল ওর। চারপাশটা আনকোরা ঠেকছিল। মা, দিদির কথা শুনতে শুনতে বুকের মধ্যেটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল।
—অ্যাই তুই খুঁড়িয়ে হাঁটছিস কেন রে...? ওর মা চেঁচিয়ে বলে ওঠে।
গলা ঠেলে ভয় উঠে আসে। ও সত্যি খুঁড়িয়ে হাঁটছে? নিজেও বুঝতে পারেনি তো? তাহলে কী সবাই বুঝতে পারছে? বাইরে থেকে সবটা বোঝা যাচ্ছে? ব্যথাটাও বারবার কাঁটা ফোটাচ্ছে গোপন রোমকূপে রোমকূপে।