অজয়ের টুর আছে। বাড়ি থেকে বেরোবে। ওর পাশে দাঁড়িয়ে মা তনুজা এবং স্ত্রী রিনি।
মায়ের মুখ গম্ভীর দেখে অজয় বলল, মা, এত মন খারাপ করছ কেন? মাত্র এক সপ্তাহের জন্য তো টুর-এ যাচ্ছি। রিনিকে দ্যাখো, ও তো মন খারাপ করছে না, হাসিমুখে রয়েছে। টেক কেযার মা। নিজের এবং রিনির খেযাল রেখো। শনিবার সকালে আমি ফিরে আসব।
বাই মা, বাই রিনি বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল অজয়।
তনুজা কিছুক্ষণ যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থেকে, তারপর বিষণ্ণ বদনে দরজা বন্ধ করলেন।
রিনি নিজের বেডরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মোবাইল ফোনটা টেবিল থেকে হাতে তুলল।
দুকামরার ফ্ল্যাট। তনুজার জন্য একটা ঘর বরাদ্দ রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে তিনি
ড্রইংরুম-এর সোফায় বসে থাকেন। ছেলে বেরিয়ে যাওয়ার পর আজও তাই সোফায় বসলেন তনুজা।
ছেলে-বউমার বেডরুম-এর বাইরেই রয়েছে সোফাটি। ওখান থেকে ঘরের ভিতরের কথা শোনা যায় অনেকটাই।
দরজা বন্ধ করে রিনি কারওর সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। প্রথমে নীচু স্বরে কথা বলছিল। কিন্তু কথা বলতে বলতে স্বর কখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে, তা খেয়াল করেনি রিনি। তাই, তনুজা স্পষ্টতই শুনতে পেলেন, কারও সঙ্গে এখন লাঞ্চ-এ বেরোবে রিনি এবং সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরবে।
আধা ঘন্টা বাদে সেজেগুজে, হাতে পার্স নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল রিনি। তনুজা অবাক হয়ে দেখলেন যে, তাঁকে কিছু না বলেই, তাঁর সামনে দিয়ে রিনি বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।
মাথার যন্ত্রণা শুরু হল তনুজার। দুর্ভাবনা গ্রাস করল তাঁকে। মা-ছেলের সুখের সংসারে ঢুকে, এ মেয়ে সব তছনছ করে দিতে চলেছে ভেবেই, দ্বিগুন হল মাথার যন্ত্রণা। তনুজার তখন মনে পড়ে গেল, অজয় যখন রিনির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা তাঁকে বলেছিল, তখন তিনি খুশি হয়েছিলেন, অকপটে স্বাগত জানিয়েছিলেন রিনিকে। ভেবেছিলেন তাঁর ছেলের জীবন আরও আনন্দে ভরে উঠবে।
অজয় বিয়ে করার ঠিক দুবছর আগে, এক পথ-দুর্ঘটনায় মারা যান অজয়ের বাবা। তাই, মা-ছেলে মন খারাপ নিয়ে দিনযাপন করত। তারপর রিনি বউ হয়ে আসার পর, তনুজা এবং অজয়ের মন খারাপের রেশ কেটে গিয়েছিল অনেকটাই।