দেখতে দেখতে রাত বারোটা বেজে গেল। তাপস ও সজল খাওয়া শেষ করে চুপ করে পাশে এসে বসেছে। আমাদের খাওয়া বাকি। খিদেতে শরীর আনচান করছে, ফলস্বরুপ আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে শুরু করেছে। ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বাজতে বাজতে সবার এনার্জি শেষ। সুধীর বলল, 'অনেক হয়েছে ভূত দেখা, এবার ক্ষান্ত দেওয়া যাক।' আশিসকে বললাম, “খাবারটা একটু বেড়ে দিবি?' আশিস উঠে গেল। আমরাও আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়লাম। সজল জল খাবে বলে আমাদের আগে ঘরে ঢুকল। ওর পিছনে আমি, আমার পিছনে তাপস, শেষে সবার পিছনে সুধীর।
সুধীর ঘরের ভিতর পা দিতে যাবে, এমন সময় “টং” আওয়াজ কড়া ফেলার। সুধীর এক ধাক্কায় তাপসকে সরিয়ে দিয়ে হুমড়ি খেয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। ততক্ষণে আমাদের মধ্যেও হুড়োহুড়ি লেগে গেছে। সজল বলল, ‘দরজা বন্ধ কর, আরে আগে দরজটা বন্ধ কর।' কে দরজা বন্ধ করবে? ভয়ে সবাই আধমরা। এতদিন শুনেছিলাম লোকে বলত, কী রে ভূত দেখেছিস নাকি! সত্যি সত্যি ভূত দেখলে মুখের অবস্থা কী হয় আজ তা দেখলাম। কোনও মতে বারান্দার দরজা ও মেন দরজা বন্ধ করা হল। খাওয়া সবার মাথায় উঠেছে। সবাই গেলাস গেলাস জল খাচ্ছে। ইতিমধ্যে ভয় কাটানোর জন্য তিনজন সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছে। সিগারেটের পর সিগারেট খেয়ে পেটে কিছু খাবার ফেলে রাত দেড়টার সময় সবাই শুতে গেল। পরেরদিন সারাদিন আগের দিনের ঘটনার ও ভূত নিয়ে চর্চা চলল।
এরপরে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। গেটের ঘন্টার আওয়াজ প্রাত্যহিক হয়ে গেছে। ব্যাপারটা গা সওয়ার পর্যায়ে চলে গেছিল।
বাড়িওয়ালি মাসিমার অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়েছে। আমরাই ডাক্তার ঠিক করে দিলাম। ডাক্তার ইমিডিয়েট অপারেশন করতে বলেছেন। ডেটও দিয়ে দিয়েছেন। মাসিমার অপারেশনে ভীষণ ভীতি, যদি জ্ঞান না ফিরে আসে! আমরা বোঝালাম এটা একটা সামান্য অপারেশন, আকছার হচ্ছে, সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। মাসিমা নাছোড়বান্দা, বললেন, “তোমরা আমার অপারেশনের সময় নার্সিংহোমে থেকো। তোমাদের মোসোমশাই ভরসা পাবেন।”