একসময় আলাস্কার ভূমির উপর বিচরণ করত ডাইনোসর, বাইসন, ম্যামথ বিশালাকার প্রভৃতি প্রাণী। আনুমানিক বিশ হাজার বছর পূর্বে সাইবেরিয়া পার হয়ে আলাস্কায় প্রথম মানুষের পদচিহ্ন পড়ে। আরও দশ হাজার বছরেরও কিছু আগে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। সেই জনগোষ্ঠীই এখনকার আলাস্কার আদিবাসীদের পূর্বপুরুষ, এদের বলা হয় অ্যালেসিয়ান। ১৭৪১ সালে প্রথম ভারচুয়াস বেরিং নামে এক ইউরোপীয় অনুসন্ধানকারী দল, আলাস্কাকে আবিষ্কার করে। তারপর রাশিয়ানরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করে ও সিকটাতে তাদের সরকার গঠন করে। ক্রমে রাশিয়ান ব্যতীত ইংরেজ এবং স্প্যানিশরাও এখানে বসতি স্থাপন করতে উদ্যত হয়। তারপর ১৮৬৭ সালে ৩০ মার্চ ইউনাইটেড স্টেটস্ ও রাশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। অর্থের বিনিময়ে আলাস্কা, রাশিয়ার হাত থেকে ইউনাইটেড স্টেটস্-এর দখলে চলে যায়।
আলাস্কা উপসাগরে দেখা যায় তুষারপ্রাচীর, তুষার গ্লেসিয়ার আর কপালে থাকলে দেখা যায় তিমি মাছ, শিল মাছ, সি-লায়ন প্রভৃতি। সারা আলাস্কা জুড়েই তুষারমণ্ডিত শিখরের সারি, রুপোলি ঝরনার ঝরে পড়া, পাইন গাছের মনোরম সবুজ। দেখা যায় পথের ধারে মাঝে মাঝেই নীল জলের সরোবরে শুভ্র তুষার খণ্ডের অনুপম ভেসে যাওয়া, সত্যিই আলাস্কা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানি।
এই অপরূপা সুন্দরীকে দেখার সুযোগ আমার এল। একটি প্রসিদ্ধ টুর কোম্পানির সঙ্গে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে, চড়ে বসলাম দুবাইগামী উড়োজাহাজে। রাত্রি সাড়ে আটটায় প্লেন আকাশে উড়ল। দুবাই-য়ের সময় রাত্রি ১২-০৫-এ আমাদের দুবাই এয়ারপোর্টে অবতরণ। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে পৌঁছোলাম শেষ রাতের স্নিগ্ধ বাতাসের স্পর্শ নিয়ে। হোটেলে এসে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেওয়া।
ভোরে ব্রেকফাস্ট সেরেই রওনা হলাম এয়ারপোর্ট অভিমুখে। দুবাই থেকে চড়ে বসলাম সিয়াটলগামী এমিরেটস ফ্লাইট-ইকে-২৯৯-এ। আমাদের আকাশযাত্রা প্রায় ১৪ ঘন্টার মতো। কিন্তু সারা আকাশপথেই দিনের আলো রইল এবং সূর্যের প্রখর রৌদ্রের জন্য প্লেনের জানলার শাটার টেনে রাখতে হল। বেশ কয়েক ঘন্টা প্লেনের জানলা দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের বরফ দেখা গেল। তাড়াতাড়ি সিট ছেড়ে পিছনের জানালায় এসে দাঁড়াই। ক্রমে আকাশযান গ্রিনল্যান্ড পেরিয়ে উত্তরমেরুর কাছাকাছি এসে গেছে। ওপর থেকে দেখা যাচ্ছে জমাট বাঁধা চাপ চাপ শ্বেতশুভ্র তুষার-ভূমি, মাঝে মাঝে জমাট চাদরের উপর ছোট্ট বাটির আকারে নীল জলের গর্ত, চক্ষু ফেরানো যাচ্ছে না। বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে এই দৃশ্য চলল।