সলিহিন বলল, ‘এরপর বালিতে ডাচদের প্রতিপত্তি কিছুটা বেড়ে যায়। তারপর ১৯০৮ সালে আবার পুপুতান শুরু হয়। এবার ডেনপাসারের কাছে এক যুদ্ধে ব্লুংকুং-এর রাজা এবং তার পরিবার-সহ অনেক বালিনিজের মৃত্যু হয়। ডাচ সেনারা ব্লুংকুং রাজপ্রাসাদও ধ্বংস করে দিয়েছিল।'
—তাহলে বালিনিজরা স্বাধীনতা পেল কবে? কী করে? আমি মনোযোগী ছাত্রীর মতো প্রশ্ন করলাম।
—তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল। তখন তো আবার আরেক সমস্যা শুরু হল। কথাটা বলে সলিহিন থামল। -কী সমস্যা?
—জাপানিজরা এবার ইন্দোনেশিয়া দখল করল। জাপানিজরা ডাচদের থেকেও বেশি অত্যাচার করেছে বালিনিজদের উপর। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে হেরে জাপানিজরা এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। তারপর একটু থেমে বলল, এরপর ডাচরা আবার ফিরে আসে। কিন্তু ততদিনে ইন্দোনেশিয়ার লোকেরা বুঝতে শিখেছে, লড়তে শিখেছে। শেষ পর্যন্ত ডাচ সরকার আমাদের স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়। আর এই ‘বাজরা সন্ধি মনুমেন্ট' আমাদের সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক।
সলিহিনের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। মনে মনে খুব খুশি হলাম। ও শুধু ড্রাইভার নয়, বেশ ভালো একজন ট্যুর গাইডও বটে।
ইতিহাসের পর এবার চললাম বালির আধ্যাত্মিক জগতে মনোনিবেশ করতে। ডেনপাসার থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে বালির
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বিখ্যাত সমুদ্র দেবতার মন্দির “টানাহ লট”। মন্দিরটি ঐতিহ্যবাহী বালিনিজ স্থাপত্যের একটি অপূর্ব নিদর্শন। টানাহ লট যে শিলাটির উপর দাঁড়িয়ে আছে সেটা বছরের পর বছর ধরে সমুদ্রের ঢেউ-এর আঘাতে মেইন ল্যান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মন্দিরটি প্যাগোডার আকারে তৈরি করা হয়েছে। এই মন্দিরের স্থাপত্য থেকে বালিনিজ সমাজে হিন্দু আর বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব সুন্দর ভাবে উপলব্ধি করা যায়।
কালো আগ্নেয় শিলায় তৈরি উপকূল, এমনকী সমুদ্রের বালিও কুচকুচে কালো। নীল সমুদ্র এবং আকাশের সঙ্গে কনট্রাস্ট এই কালো বালি, আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে যেন আরও বেশি মায়াবী এবং সুন্দর করে তুলেছে।
সলিহিন জানাল, এই মন্দিরের আসল রূপ কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় দেখতে পাওয়া যায়। সূর্যাস্তের সময় পিছন দিক থেকে সূর্যের আলো পড়ে এই মন্দিরকে এক অলৌকিক রূপ দান করে। তারপর একটু দূরে দেখিয়ে বলল, ওই যে দেখছেন পাহাড়ের উপর জায়গাটা, কতগুলো চেয়ার, টেবিল দেখা যাচ্ছে— ওটা হল 'সানসেট রেস্টুরেন্ট'। বিকেলের দিকে ওখানে প্রচুর লোকের ভিড় হয়। অ্যাডভান্স বুকিং না করলে ওখানে জায়গা পাওয়া যায় না। আপনারা বিকেলে এলে ভালো করতেন।