রাজগির-নালন্দা-বুদ্ধগয়া– বুদ্ধ তথা বৌদ্ধধর্মের স্মৃতি বিজড়িত এই ভ্রমণ সার্কিট। প্রায় সব ভ্রমণার্থীরা এই সার্কিট অনুসরণ করেন, খুব সময়াভাব না হলে, এই তিনটির কোনও একটি স্থান বাদ পড়ে না।
শুরু করা যাক রাজগির দিয়ে। রাজগির যেতে হলে নামতে হবে বখতিয়ারপুর স্টেশনে। দানাপুর এক্সপ্রেস আমাদের নামিয়ে দিল বখতিয়ারপুর স্টেশনে এক শীতের ভোরে। হাওড়া থেকে মাত্র ঘন্টা আটেকের জার্নি। দূরত্ব ৪৮৬ কিলোমিটার। স্টেশনের বাইরে রয়েছে গাড়ি, ট্রেকারের মেলা– তার একটু দূরে রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। বখতিয়ারপুর স্টেশন থেকে রাজগিরের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। দল ভারী রয়েছে– পুরো গাড়ি বুকিং করেই যাত্রা শুরু। তার আগে স্টেশনের বাইরে পুরি-তরকারি আর গরম গরম জিলিপির প্রাতরাশ সমাধা করা হয়েছে।
শীতের সকাল, আকাশ মেঘলা, শনশন করে ঠান্ডা হাওয়া বইছে, ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম বিহার পর্যটনের হোটেল তথাগত বিহারে। চারপাশে বাগান, ঘাসের লনে মোড়া এই সুন্দর হোটেলটি।
রাজগির নামটি এসেছে ‘রাজগৃহ’ থেকে। রত্নগিরি তথা গৃধ্রকূট, উদয়গিরি, শোনগিরি ও বৈভাগিরি পাহাড়ে ঘেরা ছিল, খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী রাজগৃহ। রাজগির অনেকগুলি নামে পরিচিত– বাসুমতী, বরহাদ্রামাপুর, গিরিরাজ, কুশাগ্রপুর ও রাজগৃহ। এর মধ্যে রাজগৃহ নামটিই বোধহয় সবচেয়ে সুপ্রযুক্ত কারণ বেশ কয়েক শতক ধরে মগধের রাজধানী ও রাজার আবাসস্থল ছিল এই রাজগৃহ।
বুদ্ধের স্মৃতির সঙ্গে রাজগির ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বুদ্ধ এখানে বারো বছর অতিবাহিত করেন। গৃধ্রকূট পর্বতের মাথায় তিনি অবস্থান করতেন– ভিক্ষুক রূপে দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন, মহানির্বাণের পর তাঁর বাণী প্রচারিত হয়েছে এই রাজগৃহ থেকেই। এই রাজগৃহেই বুদ্ধদেব মহারাজ বিম্বিসারকে দীক্ষা দিয়েছেন, তাঁর শেষ যাত্রার শুরুও এই রাজগৃহ থেকে।
শুধু বুদ্ধদেব নয়, মহাবীর (জৈন তীর্থঙ্কর) তাঁর ৩২ বছরের ধর্মীয় পরিক্রমার মধ্যে ১৪ বছর কাটিয়েছিলেন এই রাজগিরে ও পার্শ্ববর্তী নালন্দায়। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের নানা গ্রন্থে রাজগিরকে এক সুন্দর, জনবহুল, ঐতিহ্যশালী, ধর্মনগরী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।