লাক্ষাদ্বীপের আগত্তি দ্বীপে নেমে চূড়ান্ত আশ্চর্য হয়েছিলাম। ছোট্ট দ্বীপ আগত্তি, চওড়ায় কোথাও বা ৫০০ মিটারেরও কম। সেই দ্বীপের এক ধারে দেখেছিলাম সাদা-ঘোলাটে জলের উত্তাল সমুদ্র আর অপর পাড়ে তুঁতে নীল শান্ত সমুদ্র। চিলিকা হ্রদের মধ্যে এক ছোট্ট দ্বীপ রাজহংস সেখানে দেখলাম প্রকৃতির আর এক বিস্ময়। এক পাড়ে উত্তাল বঙ্গোপসাগর আর এক পাড়ে স্বল্প গভীরতার চিলিকার ঈষৎ লবণাক্ত জল। রাজহংস দ্বীপ যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে সাতপাড়া। আর সাতপাড়া ভ্রমণ করতে হলে শুরু করতে হবে পুরী থেকে।
পুরীতে আমরা এসেছিলাম ২০-২৫ জনের একটা বড়ো দল নিয়ে। মুখ্য উদ্দেশ্য এক ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপে যোগদান। তারই অঙ্গ হিসাবে আমরা যাত্রা করেছি পুরী থেকে চিলিকার পথে। আমাদের চিলিকা ভ্রমণ শুরু হবে সাতপাড়া থেকে। সাধারণত পর্যটকরা রম্ভা বা বরকুলের পর্যটন আবাস থেকে চিলিকা ভ্রমণ করেন কিন্তু পুরী থেকে সে দূরত্ব অনেকটাই বেশি। এদিকে পুরী থেকে সাতপাড়া মাত্র ৬০ কিমি, ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে সড়কপথে পৌঁছানো যাবে। চিলিকার কোলে তৈরি হয়েছে নব পর্যটন কেন্দ্র সাতপাড়া। এখানে পর্যটক আবাসও গড়ে তুলেছে ওড়িশা পর্যটন দফতর। আর এখান থেকেই প্রাইভেট বোটে বা সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভেসে পড়া যায় চিলিকার বুকে।
পুরীর হোটেল থেকে ৩টি গাড়ি একসঙ্গে ছেড়ে দিল সাতপাড়ার উদ্দেশ্যে। পুরী শহর ছেড়ে গাড়ি এগিয়ে চলল। ঘন্টাখানেক চলার পর পেরিয়ে এলাম ব্রহ্মগিরি। এখানে দু-চারটে দোকানপাট চোখে পড়ল, গ্রামও রয়েছে। কাছেই আলারনাথ মন্দির। আমরা পুরী থেকে ২০-২৫ কিমি চলে এসেছি। একটু পরেই চোখে পড়ল দূরে চিলিকা হ্রদ। রাস্তার একপাশে চাষের জমি অন্যপাশে জলাভূমি পার হয়ে চিলিকার নীল জল। গাড়ি ছুটে চলেছে গ্রাম ছাড়িয়ে মাঠ-ঘাট পেরিয়ে রিঠা ফলের বড়ো বড়ো জঙ্গল ফেলে রেখে। পুরী জেলার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সাতপাড়ার যোগসূত্র দহিখিয়া পুল দিয়ে। এপারে মানিক পাটনা আর ওপারে সাতপাড়া।