জঙ্গলের সরু রাস্তা দিয়ে জিপ চলেছে ধীরে ধীরে। হঠাৎই ড্রাইভার জিপের গতি আরও কমিয়ে দিয়ে আমাদের ইশারায় বলে সামনে তাকাতে। দূর থেকে আমরা বুঝতে পারছি না জন্তুটা নেকড়ে না শিয়াল, সে রাস্তা পেরিয়ে ডান পাশের জঙ্গলে ঢুকে গেল। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করতে সে জানাল, সেটা একটা ভেড়িয়া বা নেকড়ে। আরও প্রায় ২৫ মিনিট জিপ চলার পরে আমাদের মনোমুগ্ধকর জঙ্গলযাত্রা শেষ হল। তেমন কিছু পশু-পাখি দেখতে না পেলেও আদিম জঙ্গলের বিশালতা ও বৈচিত্র্যে আমরা সবাই মুগ্ধ। সবার মন ভরিয়ে দিয়েছে সুন্দরী কাঙ্গের নদী। এবার আমরা নিষ্ক্রমণদ্বার দিয়ে জঙ্গলের বাইরে চলে এলাম এবং আমাদের গাড়িতে এসে বসলাম।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য চিত্রকোট ফল্স। বাইপাস ধরে ৫-৬ কিলোমিটার এগিয়ে পৌঁছোলাম চিত্রকোট রোডে। আমরা এগোলাম বাঁ-দিকে, প্রায় ৫৫ কিলোমিটারের রাস্তা। ডানদিকে রাস্তা সোজা এগিয়েছে Jagdalpur -এর দিকে। গাড়ি এবার চলেছে দুরন্ত গতিতে। মসৃণ পিচ রাস্তা। দুই পাশে সবুজের সম্ভার আম, বট, তেঁতুল আর ইউক্যালিপটাসের ছড়াছড়ি। ভারি ভালো লাগছে গাড়িতে বসে এই যাত্রা। শীত শেষে ভরদুপুরের আবহাওয়ায় হালকা উত্তাপ, সঙ্গে মধুর বাতাস। রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে বোগেনভিলিয়ার রঙিন আমন্ত্রণ। দুপুর ৩টে নাগাদ চিত্রকোট-এর কার পার্কিং প্লেস-এ পৌঁছোলাম।
লাঞ্চ করার সুযোগ হয়নি। সঙ্গে আনা কেক ও কলা দিয়ে খিদে মেটালাম। এবার গাড়ি থেকে নেমে, রাস্তা পার হয়ে ফল্স-এর দিকে এগোলাম। বাম তীরে প্রথমেই শঙ্কর মন্দির, সদ্য নির্মিত উজ্জ্বল রঙের। মন্দিরের ভিতরে কালো শিবলিঙ্গ, সামনের চাতালে সাদা রঙের বিরাট নন্দী মূর্তি। মহাদেবকে প্রণাম জানিয়ে ধীরে ধীরে বড়ো বড়ো পাথর পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম ইন্দ্রাবতীর তীরে। ইন্দ্রাবতী নদী এখানে যথেষ্ট চওড়া, শীতশেষেও স্রোতস্বিনী।
গোদাবরীর উপনদী এই ইন্দ্রাবতীর উত্স ওড়িশার কালাহান্ডি জেলার দন্ডকারণ্য ঘাট থেকে, যার উচ্চতা প্রায় ৯১৪ মিটার। তারপর নদী পশ্চিমে বাঁক নিয়ে প্রবেশ করেছে ছত্তিশগড়ের জগদলপুরে। এখান থেকে দক্ষিণে বাঁক নিয়ে গোদাবরীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে। এই ইন্দ্রাবতীকে বলা হয় সবুজ বস্তার জেলার অক্সিজেন!