অনেকেই বলেন মেঘমুক্ত দিনই পাহাড়ে সবচেয়ে ভালো৷ কিন্তু আমার মতে মেঘের খেলা আর কুয়াশা মাখা পাহাড়ের মায়াময়তার সঙ্গে কোনও সৌন্দর্যেরই তুলনা চলে না৷এমনই মেঘের চাদর ভেদ করে আমরা চলেছি সিকিম পাহেড়ের বাঁক পেরোতো পোরোতে৷ আমাদের গন্তব্য রঙ্গিত নদীতে সৃষ্টি হওয়া একটা উষ্ম-প্রস্রবণ বা hot sulphur spring দেখা। সকালে ভেসে চলা মেঘেদের সাদা ক্যানভাসের আড়ালে যে অপার সৌন্দর্যটি লুকিয়ে ছিল তা আমাদের চোখে ধরা দেয়নি ঠিকই, কিন্তু যত বেলা বাড়ল কুয়াশার মোটা বালাপোশ ছেড়ে বেরিয়ে এল প্রকৃতি৷প্রাতঃরাশ সেরে তাই বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
কিছুটা পথ গাড়িতে যাবার পর পায়ে হেঁটে যেতে হবে প্রায় ৪কিমি উৎরাই পথ। ড্রাইভার গুরুংজি আমাদের গাইড করে নিয়ে গেল ভেজা পাতায় মোড়া পাহাড়ি পথ ধরে।জঙ্গলের ফাঁকে আজস্র পাখির মেলা৷ এভাবেই চলতে চলতে দেখা পেলাম স্কারলেট মিনিভেট, ব্ল্যাক ম্যাগপাই, ব্লু ফ্রন্টেড রেডস্টার্ট, স্ট্রাইপড থ্রেটেড ইউহিনা প্রভৃতি পাখির৷ পাখি দেখা এবং ছবি তোলার যে অভিলাষ নিয়ে আজ বেরিয়েছিলাম, তা পুরোপুরি সার্থক৷সবাইকে ক্যামেরা বন্দি করতে না পারলেও বন্দি করলাম মনের মনিকোঠায়।
অবশেষে প্রস্রবণের কাছে পৌঁছে মন ভরে গেল।এটা যেন একটা natural spa৷ প্রস্রবণের জলস্রোতে শীতল হয়ে আসা আমাদের শরীর ক্রমশ উষ্ম হতে শুরু করল।খরস্রোতা রঙ্গিতের মাঝে বেশ বড়ো আকারের একটা পাথরের ওপর অনেক্ষন বসে থাকলাম।চারিদিকের নৈঃশব্দকে ভেঙে গমগম শব্দে বয়ে চলা রঙ্গিত বর্ষায় যে কী ভয়ঙ্কর রূপ নেয় সেটা আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম৷
প্রকৃতির নেশা মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল৷সম্বিত ফিরল গুরুংজির ডাকে-এবার যে উঠতে হবে ৪ কিমি খাড়াই পথ।আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম।স্মৃতিতে থেকে গেল এই অসাধারন Nature trail.
দুপুরে homestyaতে যখন ফিরলাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল গরম গরম ভাত আর ডিমভাজা৷ এর সুবাস জানান দিল পেটের ভেতরটা খাবারের জন্যই অধীর হয়ে আছে। সেদিন বিকেলটায় একটু হেঁটে কাছেই বোরং মনাস্ট্রি দেখতে গেলাম।রাতে আকাশটা একটু পরিস্কার হওয়ায় খাওয়াদাওয়ার পর মেঘমুক্ত আকাশের কালো ক্যানভাসে রত্নখচিত তারামন্ডলীর নৈস্বর্গিক শোভা উপভোগ করে অবশেষে শুতে গেলাম।জূরের পাদাড়গুলো তখন সেজে উঠেছে আলোর মেলায়৷ কোনটা কালিংপং কোনটাই বা দার্জিলিং ঠাওর করতে পারলাম না৷