খারদুংলা, নুব্রা ভ্যালি, প্যাংগন ও সাংলা ঘুরে আমরা পৌঁছোলাম লে-তে। আগের জায়গাগুলোর তুলনায় লে-র তাপমাত্রা একটু কম বলে মনে হয়েছে। লাদাখ ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায় লে-র কিছু অসামান্য জায়গা না দেখলে।
লে-আলচি-কার্গিল-জোজিলা পাস-সোনমার্গ-শ্রীনগর
সকালে কাচের জানলার পর্দা সরাতেই সূর্যালোকের মধুর আলিঙ্গন। মুখ ধুয়ে ঘরে আনালাম গরম চা। এরপর স্নান সেরে প্রাতরাশ। ব্রেকফাস্ট সেরে ট্রাভেলার গাড়ি করে বের হলাম।
প্রথমে আমরা চলেছি লে-কার্গিল রোড ধরে ৪ কিলোমিটার দূরে হল অফ ফেম-এ। টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম ভারতীয় সেনাদের তৈরি এক অসাধারণ মিউজিয়ামে। ইন্দোপাক যুদ্ধে নিহত বীর সৈনিকদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত এই মিউজিয়াম। এখানে প্রবেশ করলেই অনুভত হয় মাতৃভমির সম্মান রক্ষার্থে তাঁদের চরম আত্মত্যাগের অর্থ। এর উপরতলায় রয়েছে অপারেশন বিজয় গ্যালারি যেখানে দেখতে পাওয়া যাবে কার্গিল যুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র, সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখল করা পাক অস্ত্র ও গোলা-বারুদ। অন্য বিভাগে প্রদর্শিত হচ্ছে সিয়াচেন অঞ্চলে ভারতীয় সেনাদের ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ, গ্লেসিয়ারে সেনা ছাউনি, বরফের উপর বাসস্থান ও প্রশিক্ষণের ছবি। মিউজিয়ামের সু্য়ভেনির শপ থেকে কিনতে পাওয়া যায় টি-শার্ট, টুপি, কফি-মগ, পশমিনা শাল ইত্যাদি। মিউজিয়াম খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা এবং বেলা ২টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত।
আমাদের পরের গন্তব্য লে শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে পাথর সাহিব গুরুদোয়ারা। ন্যাশনাল হাইওয়ে ১ ধরে চলেছি। বেশ মসৃণ রাস্তা। বাঁ পাশে দূরে পাহাড়ের মাথায় বরফের কারুকার্য। ডান পাশের পাহাড়গুলো অপেক্ষাকৃত নীচু, বাদামি বর্ণের। পাথর সাহিব পেঁছে সেবকদের থেকে কমলা রঙের রুমাল নিয়ে মাথায় জড়িয়ে প্রবেশ করি গুরুদোয়ারায়। এখানে এক সাইনবোর্ডে লেখা নেপাল, সিকিম, তিব্বত, ইয়ারখন্ড ও লে হয়ে গুরু নানকজি এখানে এসে পেঁছেছিলেন ১৫১৭ সালে।
এই অঞ্চলেই এক পাহাড়ে বাস করত এক দুষ্ট দানব। সে স্থানীয় লোকজনদের আক্রমণ করে তাদের হত্যা করে, খেয়ে ফেলত। এই খবর শুনে নানকজি সেখানে পেঁছে নদীতীরে সাধনা করতে থাকেন। এতে স্থানীয় লোকরা খুশি এবং কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়। কিন্তু দানব তাঁর আগমনে ক্রদ্ধ হয়ে নানকজিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একদিন গুরুজি যখন প্রার্থনায় নিবিষ্ট ছিলেন, ওই দানব তখন পাহাড়ের ওপর থেকে এক বিশাল প্রস্তরখণ্ড গড়িয়ে দেয়, তাঁকে হত্যার জন্য। গুরুজির শরীরের স্পর্শ পেতেই ওই প্রস্তরখণ্ড অবিশ্বাস্য ভাবে মোমের মতো নরম হয়ে যায় এবং তাঁর শরীরের পশ্চাত্ভাগ ওই পাথরের মধ্যে ধীরে ধীরে ঢুকে যায়।