হিমাচলের একটি আদিম হ্যামলেট নাকো। রেকংপিও থেকে ১০৭ কিলোমিটার দূরে, এটি হ্যাংরাঙ্গ উপত্যকার বৃহত্তম গ্রাম। সুউচ্চ রিওপারগেল রেঞ্জের কোলে অবস্থিত নাকো গ্রামটি। উইলো আর পপলারে ছাওয়া ধুসর-ঊষর পাহাড়ের খাঁজে, নীল জলের লেক ঘিরে ৩৬৬২ মিটার উঁচুতে এটি অবস্থিত।
বৃক্ষহীন রুক্ষ-রুদ্র শীতল পাহাড়ের মাঝে উপস্থিত যেন সজল মরুদ্যান রূপে। গোলাকৃতি হ্রদের চারধারে সোনারঙা উইলো ও পপলার গাছ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, আর অদূরের হিম শিখরাজি থেকে চোখ ফেরানো দায়। লেকের জলে সেই দৃশ্যের প্রতিফলন। ছোটো কিন্তু সুন্দর, শান্ত ও নির্জন এই নাকো হ্রদ, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়! স্থানীয়দের কাছে এই লেক পবিত্র।
গাড়ি থেকে নেমে নাকো লেকে যাবার জন্য প্রায় ৫০০-৬০০ মিটার হাঁটতে হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ বিহার এবং কয়েকটি ছোটো বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। মন্দিরগুলির মধ্যে এটি একটি, যা দুঃখজনক ভাবে অবহেলিত। একটি পাথরের উপর রয়েছে পদচিহ্নের মতো ছাপ, দেখে মনে করা হয় সেটি গুরু পদ্মসম্ভবের।
নাকো মঠ ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে রিংচেন জাঙ্গপো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নীল আকাশের ঠিকানায় পতপত করে ওড়া লাল-সাদা-নীল-সবুজ পতাকার বাহার আর টাটকা হিমেল বাতাস অচিরেই মন কেড়ে নেয়। প্রাচীন লোটসাবা মনাস্ট্রিতে বেশ কিছু সূক্ষ্ম পুরাতন ভাস্কর্য এবং ফ্রেসকো আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একটি নতুন মন্দিরও নির্মিত হয়েছে।
নাকোকে হেরিটেজ ভিলেজ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। নাকো হল তাশিগাং মঠ পৌঁছোনোর এবং পারগেল শিখরে যাওয়ার ট্রেক শুরু করার বেসক্যাম্প। নাকো, কল্পা থেকে রেকংপিও ছবির মতো রাস্তা। প্রতিটি আনাচকানাচে ক্যামেরা পাতলেই এক একটি সুন্দর ফ্রেম। পিয়োরি থেকে যদিও ভৌগোলিক রূপ বদলে যায় আকপা, মোরাং, স্পেলো, পু, খাব। খা পেরোতে হয় শতলুজ নদীর পাড় ধরে, খাড়া পাহাড়ের গা ঘেঁষে। এ পথ রুক্ষ আর ধুলোয় মাখা। ঝুরো পাহাড় দেখলেই মনে হবে, এখনই ভেঙে মাটিতে নেমে আসবে।
এখানেই বৌদ্ধধর্মের বেশ কিছু মানুষজনের বাস। রুক্ষতার মাঝে পাহাড়ের খাঁজে, সবুজ ফসলের বাহার। ঘন আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা। মাঝে পবিত্র নাকো লেক। যব, বার্লি-সহ বিভিন্ন সবজি চাষ হয়। সবুজের আধিক্য চোখে পড়ে। চাষবাস, পর্যটন ব্যাবসাই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। স্থানীয় যুবকেরা এই ব্যাবসার সাথে সাথে, সরকারি ভাবে রাস্তাঘাট মেরামতির কাজে যুক্ত থাকে।