অনেকটা হেঁটে বাবা মন্দির ও স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত গিয়ে হাঁফিয়ে গেলাম। সিয়াচেন শুনলেই মানসচক্ষে তুষারাবৃত পাহাড়ে বরফে পা ডুবিয়ে হাঁটার দৃশ্য ভেসে ওঠে। কিন্তু চড়া রোদে এত গরম যে, কিছুই মেলাতে পারছিলাম না। হয়তো আরেকটু হেঁটে সেতুর ওপারে সুদূরে মিলিয়ে যাওয়া পিচ রাস্তাটা ধরে কিছুদূর এগোলে দেখা মিলত আসল সিয়াচেনের; মানে গ্লেসিয়ার বলতে যা বুঝি তার। সুবেদার ভদ্রলোক নিজে এসেছিলেন সঙ্গে। আমার হাহুতাশ বাড়িয়ে বললেন, 'পরতাপুর মে স্যারকো একবার সির্ফ বোলনা থা না। একদম ব্যাটেল ফিল্ড তক দিখা দেতে।' সেতুর ওপাশে তৃষিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখে ফেরার পথ ধরতে হল।
সেই পথেই আরেকটি সুন্দর সংগ্রহশালা। রাষ্ট্রীয় প্রতীক অশোকচক্রের ঠিক নীচে বসে ছবি তোলার বলে সিঁড়ির ধারিতে ঘষটে ঘষটে এমন জায়গায় উঠে গেছি, সে সিঁড়িতে পা দিয়ে নামার চেষ্টা করলে হাড়গোড় ভাঙার গ্যারান্টি ছিল। এক সৈনিক সিয়াচেনে সংঘটিত ইন্দো-পাক যুদ্ধের বর্ণনা দিতে গিয়ে একটা দামি কথা বলল, “অ্যায়সে তো দোনো তরফ কী সিপাহী রোজ মিলতে, জরুরত পড়নে পর হম এক দুসরে সে রেশন ভি মাঙ্গাকর খা লেতে হ্যায়। জংগ তো তব হোতা জব উপর সে অর্ডার আতি হ্যায়।'
‘ব্যাটেল ফিল্ড সেলফি পয়েন্ট' দেখে হাসি পেল, দীর্ঘশ্বাসও পড়ল। যুদ্ধও ‘পর্যটন পণ্য' হয়ে গেল তাহলে! একটা আর্মি জিপসিতে কয়েকজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে আমাদেরও বসিয়ে ছাউনিতে ফিরিয়ে আনা হল। ওই পেটমোটা সুবেদার ভদ্রলোকই ব্যবস্থা করে নিজে পদব্রজে এলেন। শামিয়ানার নীচে বসে তাঁকে দেখে ভূত দেখার মতো অবাক হয়ে গেলাম। অক্সিজেনের স্বল্পতা ও ঝলসানো গরমে যেখানে আমার অষ্টাদশী কন্যাও হাঁটতে গিয়ে কেঁদে-রেগে একাকার, সেখানে গায়ে গরম ও ভারী ইউনিফর্ম পরে এই প্রৌঢ় সৈনিক কি উড়ে এলেন? কী দিয়ে তৈরি এরা?
উর্বীর খেপচুরিয়াস মেজাজ অক্সিজেন দিয়ে শমিত করতে হল। গপ্পুড়ে সুবেদার আমার আহ্লাদি আওবাতালে মেয়েকে অনেক বোঝালেন, ‘বেটি, ফৌজ মে আ যাও। পাপাকা ইজ্জত দেখ রহে হো না। কোই ভি প্রাইভেট কোম্পানি মে জাওগি তো ইয়ে নহী মিলনেওয়ালা।' ভদ্রলোক শেষে বললেন, 'স্যার মেমোরিয়াল শপ সে কুছ লেকর যাইয়ে।'