চোখের মতো লেন্স হয় না আর মনের মতো মেমরি কার্ড মেলে না। চোখের সেন্সর যার যত বেটার, তার ফ্রেমও তত ওয়াইড। অ্যাপার্চারের হ্যাপা নেই, হোয়াইট ব্যালেন্সের বালাই নেই। শার্টার স্পিড হল চলতি হাওয়ার পন্থি... হাওয়া যেমন দেবে চোখের পাতা তেমন পড়বে। প্রতিটা মানুষের শরীরে এ এক ডিফল্ট ক্যামেরা। এর ভরসাতেই ডিএসএলআরটাকে ব্যাগে পুরলাম।
ভোরের আলো পাইন পাতায় গা ঘষে যখন হিমাচলি পাকদণ্ডিতে নুয়ে পড়েছিল, ঠিক তখন থেকেই ঠায় চলছে। এখন আলোর গায়ে রোদের আগুন। সূর্যটাও সকাল থেকে আশকারা পেয়ে মাথায় চেপে বসেছে। নীলচে সবুজ পীরপাঞ্জাল আর চাপচাপ মেঘমাখা ধৌলাধার তার শৈলমায়ায় ঘিরে রাখলেও, গাড়ির কাচ নামালেই মুখ পুড়ে যাচ্ছে। পাহাড় মানেই ঠান্ডা না কি? বেলা যত বাড়ে তুষার তত গলে। এতক্ষণ পাহাড়টা বেশ বুক চিতিয়েই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রসারিত বক্ষটা কেমন যেন চুপসে গেল। তবে ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে ডেপথ-এ থাকা কালার শেডসগুলো এখন অনেকটা ক্লোজ শটে। হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব।
রংবিরঙ্গি ফুলের জলসার মাঝখান দিয়ে ছুটে চলেছি।
ইতিহাসের শহর ডালহৌসিতে সত্যিই বসন্ত এসে গেছে। ভরাট সবুজকে বুকে জড়িয়ে উঠে যাওয়া খাড়া পাহাড়ের প্রাচীরের গায়ে লাল-হলুদ রং করা কাঠের মনকাড়া স্তম্ভ। অনেকটা আলোর স্তম্ভের মতো। কিন্তু দুপাশে ঝুলন্ত বাক্সে আলোর বদলে উপচে পড়া ফুলেল বনসাই। চড়া রোদে ঝলসে যাওয়া পাকদণ্ডিকে আপন প্রাণের মাধুরী ঢেলে সাজিয়ে রেখেছে।
উৎসব আছে না কি? ড্রাইভারভাইয়ের কাছ থেকে জানলাম কোনও উৎসব নয়। সামনেই বাচ্চাদের স্কুল। তাই স্কুলের আগের ও পরের কিছু রাস্তা এমন করে সাজানো। মনটা শিশু হয়ে গেল চকিতে। সত্যিই তো, মানুষ হবার শুরুর লগ্নে আগে তো প্রকৃতির পাঠ তারপর খাতার পাতায় আঁকিবুঁকি শিক্ষা। নইলে যে সবটাই বৃথা। প্রকৃতির বসন্ত ফুরোলেও মনের বসন্তকে ফুরোতে দিতে নেই। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ইতিহাসের ডালহৌসি তুষারের সাদা চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়। তখন অন্য মজা। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর ডালহৌসি বেড়াবার আদর্শ মরশুম।