কলকাতা থেকে ইন্দোর এসে আমরা মাণ্ডুর সফর সারব ঠিক করি। ইন্দোর থেকে বাসে করে প্রথমে ধার-এ নামি। কেউ কেউ ফেরার পথে ধার-এ আসেন। কিন্তু আমরা ধার বেড়িয়ে পরের দিন মাণ্ডুর বাস নিই। ভগ্নপ্রায় হলেও মাণ্ডুর স্থাপত্যশৈলী এখনও দূর দূর থেকে পর্যটকদের টেনে আনে। সেই টানে পৌঁছোই আমরাও।
অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন শহর জুড়ে। দেখার বহু জিনিস রয়েছে গোটা মাণ্ডু জুড়েই। আমাদের প্রথম গন্তব্য জাহাজ মহল। ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রাসাদ, নির্মিত হয়েছে দুটি কৃত্রিম হ্রদের সংযোগস্থলে। মুঞ্জ তালাও ও কাপুর তালাও নামের লেক দুটির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়। এই সুরম্য প্রাসাদটি নির্মাণ করেন গিয়াসউদ্দিন খিলজি। এখানে একটি হারেম নির্মিত হয়, যাতে ১৫ হাজার সেবিকা ছিল সুলতানের, সেই সঙ্গে ১০০০ খোজা প্রহরী, যাদের আনা হয়েছিল তুরস্ক, আমাজন ও অ্যাবিসিনিয়া থেকে। অসংখ্য মহল, চাতাল ও ঝুল বারান্দা ঘেরা এই প্রাসাদ, দেখলে মনে হয় জলের উপর ভেসে রয়েছে প্রকাণ্ড এক জলযান– তাই এই নামকরণ।
দেখার জায়গা আরও আছে মাণ্ডুতে। বাজবাহাদুরের প্রাসাদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। প্রাসাদের উপরের চাতালটিতে উঠলে দূরের বিস্তীর্ণ প্রান্তর নজরে আসে। দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধবনির একটা মজা আছে এই স্থাপত্যটিতে। একসময় শত্রু আক্রমণে সতর্ক থাকতে, এই প্রতিধবনির কৌশলকেই কাজে লাগানো হতো।
দেখতে ভুলবেন না রূপমতির হাভেলিও। একটি পাহাড়ের উপরে হওয়ায় প্রায় পাখির চোখে চারপাশ দেখা যায় এখান থেকে। প্রাচীন সময়ে এটি নজর মিনার হিসাবেও ব্যবহূত হতো। রানি রূপমতি এখান থেকেই বাজবাহাদুরের প্রাসাদটিও দেখতেন বলে শোনা যায়। একদিকে নর্মদার বয়ে যাওয়া, অন্যদিকে পাহাড় ঘেরা নিসর্গ– অপূর্ব এক লোকেশনে এই মহল।
রেবা কুণ্ড নামের এক জলাধার খনন করিয়েছিলেন বাজবাহাদুর, যেখান থেকে রানির হাভেলিতে জল সরবরাহ করা হতো। সেই কুণ্ডটি এখন একটি দ্রষ্টব্য মাণ্ডুর।
হিন্দোলা মহল মাণ্ডুর অন্যতম আকর্ষণ। গিয়াসউদ্দিনের সময়কালে এ আরও এক পুরাকীর্তি। অদ্ভুত হেলানো এর স্থাপত্যশৈলী– ঢাল-যুক্ত দেয়ালের জন্যই এই আশ্চর্য নামকরণ। বেলে পাথরে তৈরি এই মহলের সুরম্য শৈলী সত্যিই দৃষ্টিনন্দন। একটি কুয়া খনন করা হয়েছিল এখানে যার নাম চম্পা বাউলি। এই জলাধার থেকেই ছিল প্রাসাদের গরম ও ঠান্ডা জলের ব্যবস্থা।