সানফ্রানসিসকো থেকে ফেরার পরে ভ্রমণকালে পরিচিত হওয়া বন্ধু, রতন সরকার ঢাকা থেকে প্রায়ই ফোন করত বা হোয়াটস অ্যাপ এ ‘চ্যাটিং’ করত। কিছুদিন যাবৎ ওর মাথায় নতুন খেয়াল চেপেছিল কানাডার কুইবেক সিটি যাবার। বেশ কয়েক বার ফোন করে কিছু ‘জানা-অজানা’ তথ্য সংগ্রহ করার পর ওর উৎসাহ আরও বেড়ে গেল।
‘কুইবেক’ নামটার মধ্যেই কেমন যেন একটা যাদু আছে যা আমাকেও টানছিল অনেক দিন থেকেই। আসলে নামটির মধ্যেই কোথায় যেন লুকিয়ে আছে এক অতীত সভ্যতার সুগন্ধ। ইতিহাসের গন্ধ সবসময়ই আমাকে আকর্ষণ করে। তাই ওর প্রস্তাবে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিলাম। মোটামুটি ভাবে কীভাবে যেতে হয় তা জেনে নিয়েছিলাম ‘গুগুল’ ঘেঁটে। ঠিক সেই সময়ই রতন সরকারের ফোন এল।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঠিক করে ফেললাম, আমি দিল্লি থেকে আর ও ঢাকা থেকে ফ্লাইট নিয়ে প্রায় একই সঙ্গে কুইবেকের ‘জেন লে’সেজ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে' (Jean Lesage International Airport) নামব জুলাই মাসের ১৫ তারিখে। এয়ারপোর্টে পৌঁছে শুনলাম রতন সরকারের ফ্লাইট প্রায় তিন ঘণ্টা ‘লেট’। কী আর করা যায়,ওকে ছেড়ে তো আর যেতে পারি না। লাউঞ্জের এককোণে বসে বিমান কোম্পানির দেওয়া ‘ট্রাভেল-গাইড' বইটা খুলে পড়তে লাগলাম।
কিছুটা পড়েই জানতে পারলাম— ষষ্ঠ-দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইয়োরোপিয়ান উপনিবেশকারীরা (বিশেষ করে ফরাসিরা) এই অঞ্চলে আসতে শুরু করে। এর পূর্বে এ অঞ্চলে আবেনাকি, এলগোকুইন, ইনু ইত্যাদি আদিম জাতির বসবাস ছিল। আদিবাসী এলগোকুইন ভাষায় কুইবেক বা কুবেক মানে নদী যেখানে ক্ষীণ বা সরু হয়ে গেছে। আসলে উত্তাল পাহাড়ি নদী সেন্ট লরেন্স এখানে এসে যোগীর (Saint) ন্যায় শান্ত-সমাহিত আর খর্বকায় রূপ ধারণ করেছে।
কিছুদূর গিয়ে সেন্ট লরেন্স আর একটি নদী সেইন্ট চার্লস-এর সঙ্গে মিশেছে। উত্তর আমেরিকার মহাদেশপ্রতিম ভূখণ্ড কানাডার, তেরোটি অঞ্চলের মধ্যে দ্বিতীয় জনবহুল প্রদেশ হল কুইবেক। এর রাজধানী কুইবেক সিটি আর পাশের অত্যাধুনিক শহর ‘মন্ট্রিয়াল’ ছবির মতো সাজানো-গোছানো। এই সাজানো শহরের প্রান্তে শাড়ির পাড়ের মতো বিস্তৃত বিশাল আর শক্তিশালী সেন্ট লরেন্স নদী। ফরাসি পর্যটক-ঔপনিবেশিক স্যামুয়েল চ্যাপলেইন ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম এখানে আসেন এবং আদিবাসী এলগোকুইনদের দেওয়া নামেই (কুইবেক) ফরাসি বসতি স্থাপন করেন। এখনও এখানে শতকরা ৯৫ জন ফরাসি ভাষাভাষি (মাতৃভাষা)। অবশ্য এক তৃতীয়াংশ লোক ইংরাজি ও ফরাসি দুই ভাষাতেই কথা বলতে পারেন। স্থানীয় লোকজন খুব সহৃদয় আর বন্ধুভাবাপন্ন। ভাবলাম, কুইবেক ভ্রমণ সত্যিই উপভোগ্য হবে।