ওড়িশা সরকার মহানদীর দুই পাশে অবস্থিত সাতকোশিয়া গর্জ অভয়ারণ্য-এর বিজ্ঞপ্তি জারি করে ১৯৭৬ সালের ১৯ মে। এই স্যাংচুয়ারির আয়তন ৭৯৫.৫৯ বর্গ কিলোমিটার। সাতকোশিয়া টাইগার রিজার্ভ গঠিত হয় ২০০৭ সালে, সাতকোশিয়া গর্জ ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি এবং পার্শ্ববর্তী বৈসিপল্লি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি-র মিলনে, যার আয়তন ৯৮৮.৩০ বর্গ কিলোমিটার। এই টাইগার রিজার্ভ-এর অবস্থান পূর্বঘাটের আর্দ্র পর্ণমোচী বৃক্ষের জঙ্গলে। শাল, সেগুন, মহুয়া, পলাশ, শিমূল ও আরও বিভিন্ন বৃক্ষের সমাবেশ এই মিশ্র পর্ণমোচীর জঙ্গলে।
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে লেপার্ড, বুনো শুয়োর, ঢোল (বন্য কুকুর), ডোরাকাটা হায়না, শ্লথ বিয়ার এবং জংলি বিড়াল। জঙ্গলে তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যাও কম নয়। প্রথমেই নাম করতে হয় হাতির। এছাড়া রয়েছে চিতল হরিণ, শম্বর, কোটরা হরিণ, হনুমান, শজারু এবং প্যাঙ্গোলিন। সরিসৃপদের মধ্যে জলে রয়েছে কুমির ও ঘরিয়াল এবং ডাঙায় পাইথন। এই জঙ্গলের আর এক আকর্ষণ অবশ্যই ইন্ডিয়ান জায়েন্ট স্কুইরেল।
নদীতীর থেকে উঠে ধীরে ধীরে চলতে থাকি হালকা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে জঙ্গলপথের দুপাশেই গোটা কয়েক কুচিলা গাছ, যার ফল বড়ো ধনেশ পাখি (ওড়িশায় পরিচিত বড়ো কুচিলা খাঁই নামে)-র প্রিয় খাদ্য। ফিরে এলাম ক্যাম্পে। আমগাছের ছায়ায় বসার জায়গা, সেখানেই গিয়ে বসলাম তিনজনে। জানলাম, টিকরপাড়া গ্রামের লজ্জাকর, অতীত কাহিনি এবং ওড়িশা সরকারের মহান উদ্যোগে এই গ্রাম কীভাবে আজ রাজ্য পর্যটনের এক উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চা পান করে বিকেল ৫টায় আমরা তৈরি হলাম সানসেট পযে্ট-এ যাবার জন্য।
টিকরপাড়া নেচার ক্যাম্প থেকে জঙ্গল পথে মহানদীর তীরে সানসেট পয়েন্ট-এর দূরত্ব প্রায় ১১ কিমি। দুপাশে হালকা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে মনোমুগ্ধকর পথ। ফাঁকা জায়গায় মাঝে মাঝেই বনদফতরের উদ্যোগে বহু কমলালেবুর গাছ লাগানো হয়েছে। কারণ এই গাছের পাতা বা ফল কোনওটাই হাতি, গরু কিংবা হনুমান কারুরই পছন্দের নয়। ফলে, কম খরচে কমলালেবু ফলিয়ে এবং সেগুলো রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে সরকারের যথেষ্ট আয় হয়। আরও একটু এগিয়ে দেখি, এখানে-সেখানে বহু কাজু গাছ লাগানো হয়েছে। বনদফতরের কাজের প্রশংসা করতেই হয়।