মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন উপকূলের এক নিরালা অবসরের ঠেক তারকারলি সাগরবেলা। দিন কয়েক ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়ার অবসরের ঠেক তো ভূ-ভারতে কতই আছে। ব্যাস্ পকেটের রেস্ত আর একটুখানি সুযোগ খুঁজে বেড়িয়ে পড়লেই হল। মহারাষ্ট্রের মালভান তালুকে আরবসাগরের কোল জুড়ে সৌন্দর্য আর লাবণ্য নিয়ে পড়ে আছে তারকারলি নামের ছোট্ট কোঙ্কনি গ্রামটি।
খানিক দূরেই গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে কারলি নদী। নারকেল বীথি ছাওয়া গাঢ় নীল জলের কারলি নদী আবছা একটা বাঁক খেয়ে চলে গেছে গ্রামটিকে পাশে নিয়ে। আরও কিছু দূর গিয়ে নিজেকে সটান সঁপে দিয়েছে আরবসাগরের অনন্ত জলে। কারলি ও সাগর মোহনার জলে তখন নিরন্তর ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা। কারলির মোহনাটাই অসম্ভব সুন্দর এক দৃশ্যময় স্থান।
সাগরপানে মুখ ফেরানো এমটিডিসি’র হলিডে রিসর্টের কটেজগুলি, গ্রাম্য পরিবেশকে সচেতন ভাবেই নিজের আঙিনায় এনে ফেলার প্রয়াস। মালভান জনপদ থেকে তারকারলির দূরত্ব মাত্র ৭ কিমি। এক্বেবারে অনাঘ্রাতা সৈকত বলে পরিচিত এই সমুদ্রতট। সেই জলজ মজলিশের দিকে কেবল চেয়ে থেকেই নিপাট ভ্রমণসুখে কাটিয়ে দেওয়া যায় সময়ের অনেকখানি। শুধুই তাকিয়ে থাকা অপলক, আর ঢেউ গোনা।
মালভান নামের ব্যস্ত জনপদটির মূল আকর্ষণ হল সিন্ধুদুর্গ। ‘সিন্ধু’ অর্থাৎ ‘সাগর’ এবং ‘দুর্গ’ অর্থাৎ ‘কেল্লা’। ভরা সাগরের মাঝে ওই কেল্লাটির অবস্থান হওয়ায় এটি সিন্ধুদুর্গ নামে পরিচিত। মালভান জেটি থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ফেরি নৌকা পৌঁছে দিয়ে আসে দুর্গের প্রবেশ পথে। আবার ফিরতি ফেরি নৌকায় মালভান জেটিতে ফেরত আসা।
আঁকাবাঁকা দুর্গপথ ও বিয়াল্লিশটি বুরুজ-সহ এই কেল্লাটি শিবাজি, জলদস্যু ও সমুদ্রপথে আগত বহির্শত্রুদের মোকাবিলার জন্যই সাগরমাঝে এই ‘কুরতে’ নামক পাথুরে দ্বীপটিতে নির্মাণ করেন। সাগরমুখী একটি নজরমিনারও রয়েছে। মূল প্রবেশপথটি এমনই একজায়গায় অবস্থিত যে, আগন্তুকদের ধারণা করাই মুশকিল। শিবাজির নৌসেনা বাহিনীর নাম ছিল ‘মাভ্লস’। তারা ও তাদের পরিবারবর্গ থাকতেন সেই সময়, যার মধ্যে দুটি মুসলমান ধর্মাবলম্বী পরিবারের নিত্য কাজ ছিল সন্ধ্যারতির সময় নাকাড়া বাজানো। শিবাজি তাঁর সমস্ত প্রজাদেরই জাতিধর্ম নির্বিশেষে সমান নজরে দেখতেন। শিবাজি পুত্র রাজারাম দুর্গ অভ্যন্তরে শিবাজি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিবছর শিবাজি জয়ন্তীতে এখানে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পালিত হয়। এছাড়াও মালভান অঞ্চলে রামনবমী, শিবরাত্রি, হোলি, জন্মাষ্টমী ও গনেশচতুর্থীতেও ধুমধাম করে উৎসব পালিত হয়। একখণ্ড পাথরের উপর বীর শিবাজির হাত ও পায়ের ছাপ রাখা আছে দুর্গের একস্থানে।