এবার আমাদের সফর হিমাচল প্রদেশ। বিশদ ভাবে বলতে গেলে পশ্চিম হিমাচল। প্রথমে তো জায়গাগুলি নির্বাচন করে পৌঁছে গেলাম হিমাচল প্রদেশের হেল্পলাইন টুরিজমের অফিসে। এরা হোটেল ও গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে। আমাদের গন্তব্যের তালিকা দেখে সংস্থার কর্ণধার নবীনবাবু বললেন, আমি পরপর সব সাজিয়ে দিচ্ছি। তবে আমি সাজেস্ট করছি, এর সঙ্গে বারোট জায়গাটি যোগ করে দিন।
বারোট সম্পর্কে এর আগে উৎসাহব্যঞ্জক বা নেতিবাচক কিছুই শুনিনি, তাই একটু দোনামোনা করছিলাম। নবীনবাবু বললেন, আমার কথা শুনুন আপনারা, ঠকবেন না। অগত্যা বারোট আমাদের ভ্রমণ তালিকায় ঢুকে গেল। ভ্রমণের পর্যায়ক্রম অনুয়ায়ী বারোট রয়ে গেল ভ্রমণ তালিকার একেবারে শীর্ষে।
আমাদের প্রথম গন্তব্য ধর্মশালা বিমানবন্দর। তবে কলকাতা থেকে ধর্মশালার কোনও উড়ান নেই। তাই প্রথমে কলকাতা থেকে দিল্লি। দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ঘন্টাচারেক ধর্মশালাগামী বিমানের জন্য। তার জন্যে আবার টার্মিনাল পরিবর্তন করতে হবে। এ পথের বিমানগুলি সব ছোটো। তবে, বিমানে উঠে দেখা গেল সব সিট ভর্তি।
ঘন্টাখানেকের বিমানযাত্রায় আমরা পৌঁছে গেলাম ধর্মশালা বিমানবন্দরে। এই বিমানবন্দরের প্রচলিত নাম ধর্মশালা। টিকিটেও সেই নাম লেখা আছে। কিন্তু সরকারি ম্যাপে এই বিমানবন্দরের নাম গাগ্গল আর বিমানবন্দরে লেখা কাংড়া এয়ারপোর্ট। নামের এই গোলকধাঁধার রহস্য অবশ্য ভেদ করতে পারলাম না।
এয়ারপোর্টে আমাদের ভ্রমণসংস্থা নিযোজিত বাহন নিয়ে ড্রাইভার মনোজ উপস্থিত। ট্রাভেরা গাড়িতে আমাদের ৫ জনের বসার কোনও অসুবিধা নেই। গাড়ির মাথায় মালপত্র চাপিয়ে যাত্রা শুরু করলাম।
আজকে আমাদের গন্তব্য বারোট তবে পথে হয়তো আরও কিছু দ্রষ্টব্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কাংড়া থেকে আমাদের রুট হবে পালামপুর, বৈজনাথ, যোগিন্দরনগর হয়ে ১৩২ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছব বারোট। রাস্তায় মাঝে মাঝেই যানজট হচ্ছে কারণ রাস্তা তো বেশি চওড়া নয়।
যাত্রাপথে আমাদের প্রথম স্টপ হল কাংড়ার বিখ্যাত চামুণ্ডা দেবী মন্দির। মন্দিরটির অবস্থান বড়ো রাস্তা থেকে কয়েক পাক নেমে একেবারে নদীর ধারে। নদীকে ঘিরে রয়েছে পাহাড় আর সেই পাহাড়ের গায়ে ঠাসা পাইনবন ও অন্যান্য গাছের চিরসবুজ উপস্থিতি। নদীর নাম বাণগঙ্গা। পাথরে ভরা তার বুক আর সেই বুক চিরে চলেছে জলপ্রবাহ। সেই জলে অনেকেই মনের আনন্দে স্নান করছে। এলাকাটি পুণ্যার্থী ও ভ্রমণার্থীদের ভিড়ে ঠাসা। কাংড়া শহরে এই মন্দিরের আশেপাশে অনেক হোটেল, লজ, আশ্রম রয়েছে। অর্থাৎ এই অঞ্চলে জনসমাগম ভালোই হয়।