শহুরে জীবনের ব্যস্ততার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়েছি, এক নির্জন জঙ্গুলে পরিবেশে সপ্তাহশেষের নীরালা যাপনের জন্য। পাখপাখালির স্বর্গ ভরতপুর দিল্লি থেকে খুব দূরে নয়। সেইমতো পথনির্দেশ মেনে গাড়িতে ফরিদাবাদের জনবসতি ছাড়িয়ে মথুরা-ভরতপুরগামী পথ ধরেছি। সঙ্গে রয়েছে জোরালো বাইনোকুলার, ক্যামেরা, চার্জার, টর্চ প্রভৃতি জরুরি অ্যাক্সেসরি।
ভরতপুর স্যাংচুয়ারির গেটে পৌঁছোতেই মনটা চনমনে হয়ে উঠল। এন্ট্রি টিকিট সংগ্রহ করে সোজা আমাদের আস্তানা, হোটেল ভরতপুর অশোক-এর দিকে এগোলাম।
ভরতপুর ন্যাশনাল পার্ক-এর ডাক নাম কেওলাদেও ন্যাশনাল পার্ক। উদ্যানের ভিতরে প্যাডেল রিকশায় চড়ে জঙ্গলের নির্জনতা উপভোগ করা ও বার্ড ওয়াচিং দুই-ই সারতে পারেন।
সামান্য বিশ্রামের পর আমরা এই জঙ্গুলে সফর শুরু করলাম। বনজ গন্ধ নাকে এসে ঝাপটা মারছে ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে। নানা অচেনা গাছ গুল্মে ভরা জঙ্গলে, এখানে ওখানে স্যাঁতসেঁতে জলাভূমি।
মার্শি ল্যান্ড বলতে যা বোঝায় পাতায় ছাওয়া সেই বনভূমির পথ চিরে চলেছে রিকশা। অজস্র প্রজাতির পাখির বাস এই ভরতপুর। জলের মধ্যে ইতস্তত পড়ে থাকা শুকনো গাছের গুঁড়ির কোথাও মাছরাঙা, কোথাও সারসের ঝাঁক। শুকনো পাতায় সরসর আওয়াজ তুলে একেবেঁকে চলে যায় সরীসৃপ। গাছে গাছে অজস্র গিরগিটি, বাঁদর এমনকী বনবিড়ালেরও দেখা মেলে কদাচিৎ। তপস্বীর মতো বসে থাকতে দেখলাম একটি প্যাঁচাকে। কে বলবে এই প্রাণীটিই রাতে কী ভয়ানক হয়ে ওঠে!
অনর্গল ঝিঁঝিঁর ডাকে কেমন যেন ঝিম ধরে যায়। সেই সঙ্গে চেনা-অচেনা পাখির কলকাকলী। কথা না বলে সেই বন্য সৌন্দর্যের সবটুকু রূপসুধা পান করে চলেছি আমরা।
কখনও ক্যামেরায়, কখনও বাইনোকুলারে ধরা দিচ্ছে কপারস্মিথ বারবেট, গ্রিন বি ইটার, ইউরেনিয়ান কুট বা লাফিং ডাভ।
চলতে চলতে এসে পড়লাম এক প্রশস্ত ঝিলের ধারে। একটি মরা গাছকে আঁকড়ে সেখানে বাসা বেঁধেছে অজস্র পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। ঝিলের ধার ঘেঁষে পেন্টেড স্টর্ক-এর দল সংসার পেতেছে। চোখে পড়ল কিছু হুইসলিং ডাক-ও। চোখ ভরে দেখছি পাখির স্বর্গভূমি।