উত্তরবঙ্গগামী যে-কোনও রাতের ট্রেনে উঠলেই, প্রথম যে-অনুভূতিটা হয় তা হল, এক ঘুমে সকাল এবং সকাল হলেই কাঞ্চনজঙঘা। এবারের ড্রিম ডেস্টিনেশন চটকপুর। নামটা অনেকেরই না-শোনা। কিন্তু চট করে পৌঁছে যাওয়ার এমন অপূর্ব লোকেশনে যারা এখনও গিয়ে উঠতে পারেননি, তাদের জন্য এটা অবশ্যই দুর্ভাগ্যের। দার্জিলিং-এর সেনচাল ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির অন্তর্গত এই ছোট্ট গ্রামটা বড়োই আন্তরিক, বড়োই মনকাড়া।
মনে পড়ল একবার দার্জিলিং থেকে টয় ট্রেনে নামার সময় সোনাদা নামের একটি স্টেশন পড়েছিল। জানা গেল সেই সোনাদার থেকে মাত্রই ৭ কিমি দূরে অবস্থিত এই ইকো ভিলেজ চটকপুর। কাঞ্চনজঙঘার ব্যাকড্রপ আর ১৮টি পরিবারের মোট ৯০ জন মানুষ নিয়ে নিরিবিলি একটি গ্রাম। হিল কার্ট রোড ধরেও পৌছনো যায়, বিকল্পে শিলিগুড়ি থেকে রাম্বি, মংপু, জোড় বাংলা হয়ে চটকপুর। আমরা ধরলাম বিকল্প পথ। ৭৫ কিমি রাস্তা, যার শেষের ১২ কিমি জঙ্গল আর বোল্ডারে ছাওয়া।
এই ইকো ভিলেজে রয়েছে হোম স্টে’র সুযোগ, আর আছে বনদফতর আর গ্রামের নিজস্ব কো-অপারেটিভ-এর যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা চারটি স্বয়ং সম্পূর্ণ কটেজ।
রুম-হিটার আর গিজারের সুবিধা আছে দেখে বেশ নিশ্চিন্ত লাগল। সূর্য মধ্যগগনে। তাই প্রথমেই মধ্যহ্নভোজের পালা সেরে নিই।
শীতের অলস দুপুরে পায়ে হেঁটেই ঘুরে ফেলা যায় গ্রামখানা। দার্জিলিং-এর টুরিস্টদের মধ্যে বরাবরই একটা বাড়তি আগ্রহ থাকে টাইগার হিল থেকে সানরাইজ দেখার। এখানে মাত্র দশ মিনিটের হাঁটা পথে রয়েছে এমনই একটি ভিউ পয়েন্ট, যা টাইগার হিল-এর চেয়ে কোনও অংশে কম আকর্ষণীয় নয়। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখে মুগ্ধ হলাম আমরা। পরিষ্কার আকাশ, সুন্দর আবহাওয়া। নিমেষে তার আন্তরিক আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল চটকপুর।
ভোরবেলা জানলার শার্সি গড়িয়ে এক ফালি নরম রোদ এসে ঘুম ভাঙাল। ছুটে ঘরের বাইরে বেরোতেই চোখ ঝলসে স্বাগত জানাল কাঞ্চনজঙঘা। কাছেই একটি গাছে চোখ আটকাল। এক ঝাঁক ব্লু ম্যাগমাই সেখানে জমিয়েছে খামখেয়ালি আড্ডা। সারাদিনে কটেজের গা-ঘেঁষা গাছগুলোর আনাগোনা হল হিমালয়ান বুলবুল, ফ্লাই ক্যাচার, ব্ল্যাক রেডস্টার্ট, প্রিনিয়া-সহ বহু ধরনের পাখির।