ভোপালের নাগরিক আধুনিকতা, মাণ্ডুর মহল আর পাঁচমারির সবুজে ছাওয়া ভূমি : এক কথায় এই হল মধ্যপ্রদেশ। অনন্য, অনবদ্য, অসাধারণ Travelogue।
পাঁচমারি
আপনি যদি প্রকৃতি-প্রেমিক হন, তাহলে পাঁচমারি আপনার মনের মতো জায়গা হতে পারে। চারদিকে ছড়ানো সবুজ নিবিড় পাহাড়-ঝরনা-জলাশয় : প্রকৃতি যেন নিজের হাতে সাজিয়েছে শান্ত এই শৈল শহরটিকে।
শান্তিতে কয়েকদিন এই নিরালা পরিবেশে কাটানোর জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকরা হামেশাই পাঁচমারিতে আসেন। এখন হানিমুন-কাপলদের কাছেও জায়গাটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ব্রিটিশ আমলে পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা এই ছোট্ট জনপদে, ইদানীং ফিল্মের শুটিংও হচ্ছে পুরোদমে। নির্জন শোভার পাশাপাশিই গা-ছমছমে বন্য পরিবেশ পাঁচমারির বৈশিষ্ট্য।
১৬২২ সালে ক্যাপ্টেন লেরটন ফোরসাইথ সতপুরা পাহাড়ের কোলে এই অঞ্চলটিকেই নির্বাচন করেছিলেন ব্রিটিশ সামরিক স্যানাটোরিয়াম ও রিসর্ট গড়ে তোলার লক্ষ্যে। স্বাধীনতার পরে বেশ কিছু সময় ধরে মধ্যভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানীও ছিল পাঁচমারি।
আধুনিক সময়ে ভ্রমণের সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে। পাঁচমারিও সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে দূরে থাকতে পারেনি। বছরের বেশিরভাগ দিন পাঁচমারি থাকে মেঘে ঢাকা, ফলে বাতাসে একটা হিমেল ভাব প্রায় সবসময়ই থাকে। কিন্তু, এমন প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও এখানে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। বছরের শেষদিনে এখানে তিলধারণের জায়গাও থাকে না।
বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্রই ১৫ কিলোমিটার দূরে পাঁচমারির আর একটি দর্শনীয় স্থান জটাশংকর। পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে জায়গাটি। জটাশংকর আসলে একটি বড়োসড়ো গুহা। ভিতরে একটি জলাশয়ও আছে। গুহার ভিতরে ঢুকেই আপনার মনে হবে, কোনও তুষারাবৃত এলাকায় চলে এসেছেন। তবে উপরদিকে তাকালে কিন্তু ভয়ে শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে আসবে। দুইটি পাশাপাশি পর্বতের সংযোগস্থলে আটকে থাকা বিশাল শিলাখণ্ডটি দেখে মনে হবে, এই বুঝি গড়িয়ে পড়ল! গুহার ভিতরে থাকা জলাশয়ের শেষ প্রান্তটা অবশ্য এখান থেকে দেখা যায় না। তবে, অনায়াসে স্নান করে নিতে পারেন।
কাছাকাছিই রয়েছে পাণ্ডবগুহা। এর ভিতরে ঢুকে আওয়াজ করলে প্রতিধবনি শোনা যায়। কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজালে তার আওয়াজ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কারও কারও মত হল, পুরাকালে পাণ্ডবরা এইসব গুহায় তাদের অজ্ঞাতবাসের দিনগুলি কাটিয়েছিলেন। আবার অনেক পুরাতত্ত্ববিদ বলেন, এই গুহাগুলি বৌদ্ধ আমলে নির্মিত। গুহার ছাদ থেকে পাঁচমারির আশ্চর্য মনমোহিনী সৌন্দর্য দেখলে সেখান থেকে আর নড়তে ইচ্ছে করবে না। গুহার বাইরে সুদৃশ্য বাগান নির্মাণ করা হয়েছে।