নতুন কুইবেকের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুইবেকের আঞ্চলিক (প্রাদেশিক) পার্লামেন্ট। ঠিক পুরোনো শহরের দেয়ালের বাইরে একটি টিলার উপর তৈরি কুইবেকের আঞ্চলিক জাতীয় সংসদভবন। ছবির মতো সাজানো পার্কের (পার্লামেন্ট গার্ডেন) মাঝখানে বিশাল সুউচ্চ সুদৃশ্য আটতলা অট্টালিকা সদম্ভে তার অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। সামনে সাজানো বাগানের মাঝখানে সুদৃশ্য বিশাল মনোরম ফোয়ারা থেকে অনবরত জল উঠছে। জানা গেল, এটি বানাতে ৯ বছর (১৮৭৭-১৮৮৬) সময় লেগেছিল।
এই অট্টালিকায় কুইবেকের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সরকারি আবাস আর কুইবেকের জাতীয় সংসদ (বিধানসভা) সদন। এই পার্লামেন্ট গার্ডেনের সন্নিকট ‘এসপ্ল্যানেড পার্ক”-এর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে সেন্ট লুই গেটে আছে বিখ্যাত ভারতীয় শিল্পী গৌতম পাল কৃত সুদৃশ্য মহাত্মা গান্ধির আবক্ষ মূর্তি। আর একবার মনে হল, পৃথিবীর প্রায় সব বড়ো বড়ো শহরেই মহাত্মার এক বা একাধিক মূর্তি আছে। মহাত্মাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম পুরোনো শহরের দিকে।
এখান থেকে পাথরের রাস্তা নীচে নামতে শুরু হল, চললাম পুরোনো কুইবেকের দিকে। দেখতে দেখতে দৃশ্যটা কেমন বদলে যেতে লাগল। দুপাশে সাজানো ঘেঁষাঘেঁষি দোকানপাঠ, রেস্টুরেন্ট, মল, সিনেমাহল ইত্যাদি শুরু হয়ে গেল। কয়েক পা হাঁটার পর দেখতে পেলাম বাঁদিকে সুউচ্চ আর সুদৃশ্য নর্টারদাম গির্জা ! (Basilica De Notre Dame) এটি কানাডার সবচেয়ে পুরোনো গির্জা। গির্জার ভূগর্ভে চির শান্তিতে শয়ন করে আছেন কুইবেকের অতীতের চারজন শাসক (গভর্নর) আর তৎকালীন বিশপ। এটি কানাডার ন্যাশনাল হিস্টোরিক্যাল সাইটেরও অন্যতম।
শুনলাম আগুনে পুড়ে যাবার পর নতুন করে এটাকে বানানো হয়েছে। এখানে কোনও প্রবেশ দক্ষিণা নেই। নেই কোনও ধর্মমত ভেদাভেদ। সকলেরই প্রবেশাধিকার আছে। ভিতরে ঢুকে দর্শন ও শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করার পর, সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতেই আবার দেখা হল মনমোহক নদী ‘সেন্ট লরেন্স'-এর সঙ্গে।
নদীর বাঁধানো পাড় বা স্ট্যান্ডে অগুণিত মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। নদীর ওপারে ‘লেভিস’ শহর আর তার শহরতলি এলাকা৷ লঞ্চঘাট থেকে অনবরত লঞ্চ এপার ওপার করছে, এছাড়া দুটি চওড়া সেতু মারফতও চলছে এপার ওপার যাতায়াত। কয়েক পা এগুতেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল! নজরে এল বিশ্ব বিখ্যাত প্রাসাদসম হোটেল, শ্যাটু ফ্রন্টেনাক (Chateau Frontenac)। সত্যিই চোখ ধাঁধিয়ে যাবার মতোই ২৬০ ফুট উঁচু, ১৮ তলার ৬১১টি ঘর আর সুইট বিশিষ্ট এই বিশাল আর ব্যয়বহুল হোটেল। মোটেই আশ্চর্য হলাম না, যখন শুনলাম এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ছবি তোলার (Most - Photographed) খ্যাতি সম্পন্ন অট্টালিকা! ঠিক যেন একটি বিশাল সুদৃশ্য রাজপ্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে সেইন্ট লরেন্স নদীর পাড়ে। এমন সুন্দর স্থাপত্যের নিদর্শনকে কে আর ক্যামেরায় বন্দি করতে না চাইবে?