দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বৈশাখ দিন গুনছে গ্রীষ্মের আগমনের। পয়লা বৈশাখের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা সকলের। নতুন বছরকে মনে-প্রাণে অভ্যর্থনা জানাতে যেমন মন তৎপর হয়ে রয়েছে, তেমনি মনের মধ্যে তোলপাড় চলছে নতুন বছরের শুরুতে কী করে নিজেকে সাজিয়ে তুলে সকলকে তাক লাগানো যাবে?

পয়লা বৈশাখ বলতে শাড়ির কথাই মনে পড়ে। শাড়িতে নারী সবসময়ই অপরূপা। এটা বিয়ের মরশুমও। তাই বোশেখী সকালে কিম্বা সন্ধেয় নিজেকে সাজিয়ে তুলতে, সাজসজ্জার অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে শাড়িই বাছুন।

বাজারে বহু ধরনের শাড়ি রয়েছে। ভারতবর্ষ এক বিশাল দেশ। এই দেশের প্রতিটি রাজ্যের আলাদা আলাদা শিল্পসম্ভার রয়েছে। সেইমতো শাড়ির সম্ভারও কিছু কম নয়। তবে আসন্ন গরমকালের কথা মাথায় রেখেই এরই মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া জরুরি গরমের উপযুক্ত শাড়ি। তবে পয়লা তারিখটার কথা শুধু মাথায় রাখলে চলবে না, কারণ কাটাতে হবে সারা গরমকাল। আর গরমের জন্য সুতির শাড়ির থেকে ভালো আর কী হতে পারে। সুতির শাড়ি বলতে প্রথমেই বলতে হয় ভয়েল, লিনেন এবং বাংলার তাঁতের সম্ভারের কথা। গোটা মহারাষ্ট্র, গুজরাত এবং তামিলনাড়ু থেকে সমস্ত রাজ্যে ভয়েল সাপ্লাই হয়। ভয়েলের উপর ব্লক প্রিন্ট-এর চাহিদা গরমে তুঙ্গে থাকে। এই শাড়ি যেমন নরম, তেমনি গরমে আরামদায়ক। নানা ধরনের প্রিন্টেড ভয়েল অনায়াসেই বাজারে পাওয়া যায়। এগুলির দামও সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে।

লিনেন শাড়ি এখন ফ্যাশনে খুব ইন। এই হালকা শাড়িগুলি পরে যেমন আরাম, তেমনই গরমের সাজ হিসেবে বেশ স্মার্টও। বিভিন্ন রঙে এগুলো পাওয়া যায়, তবে হালকা রঙের লিনেন শাড়ি খরিদ্দারদের পছন্দের হট্ লিস্টে। এছাড়াও জরির কাজের সঙ্গে পাটোলা ডিজাইনের লিনেন এই বছর সকলের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

পশ্চিমবাংলার তাঁতের শাড়ি (টাঙ্গাইল, ধনেখালি, শান্তিপুরি) সবসময়ই পছন্দের লিস্টে থাকছেই। আজও এই তাঁতের শাড়ির গ্ল্যামার অনস্বীকার্য। তাঁতিরাও সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ধরনের ডিজাইনের বুননে সমৃদ্ধ করছেন নিজেদের সৃষ্টিকে। এছাড়াও তাঁতের শাড়ির উপর হ্যান্ডপেন্টিং এবং ব্লকপ্রিন্টিংও পছন্দ করছেন অনেকেই। গরমের দুপুরে হালকা রঙের হালকা কাজের তাঁত থেকে শুরু করে গ্রীষ্মরাতে সুতির শাড়ির উপরেই জরির ফুল তোলা ভারী কাজের টাঙ্গাইল অনায়াসেই সকলের মন জয় করতে পারবে। ঢাকাই জামদানি কাজের ঠাস বুননের শাড়িও রাখা যেতে পারে যে-কোনও অফিশিয়াল অথবা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পরার জন্য। মেখলা স্টাইলের হাফ অ্যান্ড হাফ শাড়ি এখন ফ্যাশনে ইন। এছাড়াও কুঁচি এবং সারা বডিতে আলাদা ডিজাইনের (পটলিপাল্লু) কাজ করা শাড়ির ফ্যাশন এখন শাড়ির বাজার মাতিয়ে রেখেছে।

সাউথ কটন শাড়ি মেয়েদের চিরকালের পছন্দের শাড়ি। পোচামপল্লী, গাদোয়াল, মঙ্গলগিরি, কেরালা কটন ইত্যাদি সবসময়ই সকলের পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে এবং গরমের আইডিয়াল শাড়ি হিসেবে এখনও অনেকেই পছন্দ করছেন। উজ্জ্বল রঙের এই শাড়িগুলি গরমেও মনকে সতেজ এবং প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। ওড়িশার সম্বলপুরি, কটকি, বোমকাই, পাসাপল্লি– সকালে বিকেলে রাতে যে-কোনও সময়ের জন্যই আইডিয়াল।

গরমের জন্য শাড়ি কিনতে গেলে খাদিকেও কোনও ভাবে বাদ দেওয়া চলে না। সাদা এবং হালকা ব্রাউন রঙের খাদির শাড়ি এখন নতুন প্রজন্মের কাছে ধীরে ধীরে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এগুলো ছাড়াও রয়েছে খেস, চান্দেরি, কোটা, লখনউ চিকন এবং সুপারনেট শাড়ি, যেগুলো গরমকালের শাড়ি হিসেবে ওয়াড্রোবে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। ছোটোবেলায় মায়েরা বসে কাঁথা বা খেস সেলাই করতেন বাড়িতেই। সেই কাঁথা আর খেস-এর স্টাইলটাকেই শাড়িতে নামিয়ে ফেলেছেন ডিজাইনাররা যার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। এছাড়া চান্দেরি, কোটা, লখনউ চিকন, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের ট্র্যাডিশনাল শাড়ি হিসেবে বরাবরই জনপ্রিয় এবং গরমের জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক এই শাড়িগুলি। তবে সুপারনেট শাড়ির জন্য কোনও একটি রাজ্য নয়, সব রাজ্যেই এই শাড়িগুলি তৈরি হয় এবং গরমে এগুলো পরেও প্রচণ্ড আরাম। এছাড়াও হালকা প্রিন্টেড সিল্ক তো রয়েইছে যার টেক্সচারের মসৃণতা গরমেও ত্বককে অস্বস্তিতে ফেলে না।

এতো গেল গরমের শাড়ি। এর সঙ্গে চাই গরমের হালকা সাজগোজ। পছন্দমতো শাড়ির সঙ্গে রং মিলিয়ে ব্লাউজ দরকার। আজকাল ফ্যাশন হচ্ছে কনট্রাস্ট রঙের ব্লাউজ দিয়ে শাড়ি পরা। পছন্দমতো স্লিভলেস অথবা হাতা বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

গরমে ঘামের হাত থেকে বাঁচতে, চুল খুলে রাখার চেয়ে লম্বা চুলে হালকা হাত খোঁপা দারুণ মানাবে। সঙ্গে যদি মাথায় ফুল বা ফুলের মালা দেওয়া যায় তাহলে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অসুবিধা হবে না। খোঁপা পছন্দ না করলে, বিনুনিও কিন্তু শাড়ির সঙ্গে মানাবে ভালো। অবশ্য চুল ছোটো হলে খোলা রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না। তবে গরমে ঘাড়ের উপর চুল এসে পড়লে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কেউ চাইলে এবং গরম সহ্য করার ক্ষমতা থাকলে চুল খোলা রেখেও নিজের সৗন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারবেন তবে এই সাজটা সম্পূর্ণভাবেই সন্ধের অনুষ্ঠানের জন্য।

মেক-আপের ক্ষেত্রেও হালকা মেক-আপই গরমের জন্য শ্রেয়। ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে চোখের মেক-আপ এবং লিপস্টিকের জন্য হালকা রং বাছাটাই বাঞ্ছনীয়। চোখের জন্য কাজল এবং আইলাইনারই যথেষ্ট। অত্যধিক গরমে মাসকারা এবং বেশি পরিমাণ মেক-আপ চেহারায় হার্ড লুক এনে দেয়।

গয়নার ক্ষেত্রেও হালকা, ছিমছাম গয়নাই পরা ভালো শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে। গরমে ভারী গয়নায় শরীর আনচান করতে পারে।

আরামদায়ক পাদুকাযুগলই একমাত্র পারে বৈশাখী এই সাজকে কমপ্লিট করতে। তাই খুব দেখেশুনে কিনুন আরামদায়ক চপ্পল অথবা সামান্য হিলযুক্ত স্লিপার, যা সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বকেই আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...