জয়পুর থেকে মাত্রই ১০০ কিমি উত্তরপূর্ব কোণে এক অপূর্ব বনভূমি বিস্তৃত, যার নাম সারিস্কা। দিল্লি থেকে গাড়িতে রওনা দিয়েছি সেই বনবাসরের উদ্দেশ্যে। সারিস্কা বিখ্যাত এর ব্যাঘ্র প্রকল্পের জন্য। এছাড়া রয়েছে লঙ্গুর, নীলগাই এবং নানা ধরনের পাখি। বনস্থলি জুড়ে পর্ণমোচি গাছের ভিড় আর পাথুরে মাটি ফুঁড়ে ইতিউতি টিলা।

৮৫০ বর্গ কিমি জোড়া এই সারিস্কা ন্যাশনাল পার্ক বস্তুত অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায় ১৯৫৮ সালে। এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন জয়পুরের মহারাজ জয় সিংহ। জঙ্গল ক্ষেত্রের মধ্যেই ইতিহাস বুকে করে দাঁড়িয়ে আছে কাঁকওয়াড়ি ফোর্ট। একসময় নাকি অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন পাণ্ডবরাও এই জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল।

২০০৫ সালে রাজস্থান ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করে এই জঙ্গলে বাঘের অস্তিত্ব কমতে কমতে প্রায় শূণ্য হতে চলেছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এরপর ‘প্রোজেক্ট টাইগার’ লঞ্চ করা হয়। ফলস্বরূপ সারিস্কার ব্যাঘ্র প্রকল্পে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ২১।

দিল্লি থেকে গাড়িতে সময় নিল সাড়ে চার ঘন্টা, ২৫০ কিমি পথ অতিক্রম করতে। দিল্লি-আজমির এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বেশ স্মুদ ড্রাইভ। আগে বুকিং না থাকলে সারিস্কায় বিপদে পড়তে হবে। থাকার জায়গা বলতে তিনটিই হোটেল– টাইগার্স ডেন, সারিস্কা প্যালেস এবং ক্যাম্প সারিস্কা। আমাদের বাসস্থান টাইগার্স ডেন থেকে জাঙ্গল সাফারি পয়েন্ট মাত্র কয়েক পা দূরত্বে।

জিপ সাফারি করলাম পরদিন ভোরে। আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে বলে পাথুরে বনভূমি। ইতিউতি সম্বরের দেখা মিলতে লাগল। কেউ কেউ ক্যামেরার সামনে থমকাল, পোজ দিল, কেউ আবার দ্রুত পায়ে জঙ্গলে গা ঢাকা দিল। দেখা পেলাম বেশ কয়েকটা ময়ূরের, নীল গাই, স্পটেড ডিয়ার ও লঙ্গুরের। গাছে গাছে নানা পাখির বাস। জঙ্গলের ভিতরে একটি মন্দির আছে।  জিপে করে সেখানে গেলে ৩০০ টাকা দিতে হয়।

গাইড পূরণ সিংয়ের সঙ্গে আমরা জিপে এবার গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। ওই নিস্তব্ধ সবুজে ডুব দিতে দিতে যেন নিজের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছি। একটা খরগোশ এসে পথ আটকাল। জঙ্গলের মধ্যে কী একটা সড়সড় শব্দ হতেই, জিপ থামালেন চালক। নিমেষে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল ঝোপের মধ্যে। হলুদ-কালো ডোরা পথ পেরিয়ে এদিক থেকে ওদিকে চলে গেল জঙ্গলের– আমাদের বাকরুদ্ধ করে দিয়ে। এতটার জন্যও আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। গাড়ি বেশিক্ষণ থামিয়ে রাখা ঠিক হবে না বুঝে গাড়ি এগিয়ে নিলেন চালক। গাড়িতে তখনও পিনপতন স্তব্ধতা। আসন্ন একটা ফাঁড়া কেটে গেল ভেবে, সকলেই যেন নীরবে হাঁফ ছাড়লেন।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...