বাচ্চাদের মধ্যে বিহেভিয়ার প্রবলেম্স খুবই কমন একটি সমস্যা। আপনি কীভাবে সেটা ডিল করছেন, তার উপর ভবিষ্যতে বাচ্চার ব্যবহার অনেকটাই নির্ভর করবে। বাচ্চাদের মধ্যে যে সমস্যাগুলো খুবই কমন, সেগুলি হল –

১) মিথ্যা কথা বলা : তিনটি কারণে বাচ্চা মিথ্যা বলে। অপরের মনোযোগ নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে, সমস্যা থেকে দূরে থাকতে এবং আত্মসন্তুষ্টির জন্য।

সমাধান : বাচ্চা মিথ্যে বলছে বুঝতে পারলে মারধর না করে তাকে জিজ্ঞেস করুন, সত্যি এটা ঘটেছে কিনা অথবা তোমার মতে কী ঘটা উচিত ছিল? সততার গুরুত্ব বাচ্চাদের বোঝান, বাড়িতে নিয়ম করুন সত্যি কথা বলা। সত্যি কথা বলতে সবসময় উৎসাহ দিন।

২) কথা অমান্য করা : অনেক সময় বাচ্চা নিজের জেদ বজায় রাখার জন্য বড়োদের কথা অমান্য করে। এই জেদকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রথম থেকেই ব্যবস্থা নিন।

সমাধান : একবারই স্পষ্ট করে বাচ্চাকে বলুন, আমার কথা যদি না শোনো তাহলে তোমার টিভি দেখা বা খেলতে যাওয়া বন্ধ।

৩) অত্যধিক টিভি, কম্পিউটার বা ফোনে সময় কাটানো : স্ক্রিন টাইম বেঁধে দিলেও যদি বাচ্চা শুনতে না চায়, চ্ঁযাচামেচি করে, তাহলে বুঝতে হবে এটা তার একটা সমস্যা।

সমাধান : বাচ্চা যদি কথা না শোনে তাহলে ইলেক্ট্রনিক জিনিস তার কাছ থেকে সরিয় নিন। বাড়ির সবাই কিছুদিন ইলেক্ট্রনিক জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, যাতে বাচ্চার কাছে নিজে রোল মডেল হয়ে উঠতে পারেন।

৪) খাওয়ার সমস্যা : বেশি খিদে পাওয়া বা কিছু খেতেই অস্বীকার করা অথবা পেট ভরা থাকলেও লুকিয়ে খাবার খাওয়া।

সমাধান : খাবার সম্পর্কে হেলদি অ্যাটিটিউড তৈরি করুন। সবজি খালি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এটা বোঝাবার চেষ্টা করবেন না। আলাদা করে সকলকে খুশি করার চেষ্টা করবেন না বরং সকলের ব্যালেন্সড ডায়েট তৈরি করুন।

৫) অসম্মান করার অভ্যাস :  কোনও নাম, যেমন মোটা লোক হলে, এই মুটকু ইত্যাদি বলে ডাকা, জিনিসপত্র ছোড়া, অন্যকে ভ্যাঙানো এগুলো বিহেভিয়ার প্রবলেমের মধ্যে পড়ে।

সমাধান : যদি মনে হয় অ্যাটেনশন ড্র করার জন্য করছে, তাহলে সম্পূর্ণ ইগনোর করুন। নয়তো পানিশমেন্ট হিসেবে কোনও একটা সুবিধে দেওয়া বন্ধ করে দিন।

৬) মেজাজ দ্যাখানো : চ্যাঁচানো, মাটিতে শুয়ে পড়া, এগুলো করে বাচ্চা তার ইচ্ছে কায়েম করার চেষ্টা করে। এই আচরণ বাড়তে দেবেন না।

সমাধান : জেদ করলেই পাওয়া যাবে না, সেটা বাচ্চাকে বোঝান। বরং কোনও জিনিস তাকে অর্জন করতে শেখান। অর্থাৎ যেটা সে দীর্ঘদিন ধরে বায়না করছিল এনে দেওয়ার জন্য সেটা কোনও কৃতিত্বের জন্য তাকে প্রাইজ হিসেবে দিন।

৭) আক্রমণাত্মক মনোভাব : হোমওয়ার্ক নিয়ে প্রবলেম মনে করলে অঙ্ক বই ছুড়ে ফেলে দেওয়া বা কোনও কারণে রাগ হয়ে থাকলে ভাই-বোন সামনে থাকলে, তাদের গায়ে হাত তোলা অনেক সময় বাচ্চারা এমন ব্যবহার করে ফেলে।

সমাধান : সুযোগ দিন নিজের ব্যবহার বদলাবার নয়তো প্রফেশনাল হেল্প নেওয়া খুব দরকার।

৮) ঘ্যানঘ্যান করা : একটা জিনিস বারবার করে বলতে থাকা। এই ধরনের ন্যাগিং অনেক বড়ো বয়স অবধি থেকে যেতে পারে। তাই ছোটো থাকা অবস্থাতেই সংশোধন করা প্রযোজন।

সমাধান : প্রথমে ইগনোর করুন। ঘ্যানঘ্যান বন্ধ করলে তবেই তার কথা শুনবেন, এমন প্রমিস করুন। সত্যিই যদি ঘ্যানঘ্যান বন্ধ করে, তাহলে ইতিবাচক রিয্যাকশন দেবার চেষ্টা করুন।

 

সন্তান সামলাতে জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনুন

 

সঠিক পেরেন্টিং

সন্তানকে অবজ্ঞা নয় : সোশ্যাল সার্কল বাড়ান কিন্তু একটা লিমিট অবশ্যই রাখুন। বাচ্চাকে বাড়িতে একা, অভুক্ত রেখে সামাজিক মেলামেশায় ব্যস্ত হয়ে পড়াটা বাঞ্ছনীয় নয়। বাচ্চার পড়াশোনা থেকে শুরু করে তাকে আরামে রাখা, তার প্রযোজন মেটানো, আপনার দাযিত্ব। সুতরাং বাড়ি সামলে তবে অন্যকিছুতে সময় দিন।

সমস্যায় সঙ্গে থাকুন : সময় কাটাবার জন্য শুধুমাত্র কোনও অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে জুড়ে থাকাটা সঠিক পন্থা নয়। সকলের সুখ-দুঃখও শেয়ার করার চেষ্টা করুন। কেউ সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করতে পিছপা হবেন না। একই ভাবে নিজের সন্তানের কোনও সমস্যা হলে অন্যের সাহায্য নিন।

অপরকে অনুসরণ নয় : আপনার আশেপাশের অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে কিছু করার প্রচেষ্টা করবেন না। তাদের মতো ব্র‌্যান্ডেড পোশাক কেন আপনার কাছে নেই বা আপনার স্ট্যাটাস কেন তাদের মতো নয়, এরকম অযথা চিন্তায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন না। নিজের সীমার মধ্যে থাকবার চেষ্টা করবেন। নিজের সন্তানকেও সেই শিক্ষাই দেবেন।

কু-অভ্যাস ত্যাগ করুন : হাই স্ট্যাটাস মহিলাদের অনুকরণ করতে গিয়ে ধূমপান, মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়বেন না। আপনি যতই এসবের থেকে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করুন না কেন, জানতেও পারবেন না, এই ধরনের নেশা কখন আপনাকে গ্রাস করতে উদ্যত হচ্ছে। সুতরাং এই ধরনের সঙ্গ পরিত্যাগ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। মনে রাখবেন আপনার দেখানো পথই, আপনার সন্তান অনুসরণ করবে।

 

 

 

 

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...