বাঙালির নতুন বছরের শুরুর দিনটি আসন্ন প্রায়। পয়লা বৈশাখ। জমজমাটি আড্ডা, খাওয়া, ফ্যাশন আর সাজগোজ। নতুন বছরের শুরুতে বাঙালির সবচেয়ে পছন্দের পোশাকটি কিন্তু এককথায় বলা চলে শাড়ি। শুধুমাত্র এই দিনটির জন্য শাড়ির বিকল্প বোধহয় আর কিছু হয় না। আসুন শাড়ি নিয়েই আজ আমাদের এই চর্চা।
নীলাঞ্জনা ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে উঠছে। দোকানের সমস্ত পসারই প্রায় নামিয়ে ফেলেছে। প্রত্যেকটি পছন্দসই শাড়ি। তাই কনফিউশনটা আরও বেশি। সেলসম্যানটিও ধৈর্য ধরে একটার পর একটা শাড়ি দেখিয়ে চলেছে। প্রায় নটা-দশটা শাড়ি কিনবে মায়ের ফরমায়েশ মতো সকলকে দেবার। অস্থিরতা চেপে রেখেই, নীলাঞ্জনা সেলসের ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করে নিল, এই বছরে নতুন কী শাড়ি উঠেছে? ‘দিদি ফ্যান্সি শাড়ির মধো এবারে ইয়ং মেয়েদের হট্ ফেভারিট হল বাহুবলী শাড়ি।’ বাহুবলী শাড়িতে ছাপা রয়েছে এই ছবির চরিত্র। সিল্ক, জরজেট-এ পাওয়া যাচ্ছে এই শাড়ি। এছাড়াও শিফন, নেট, বাঁধনির উপর গোটা ওয়ার্ক, লহরিয়া, ঘটচোলা, মটকা, লিনেন, কটন শাড়ি তো রয়েইছে। পয়লা বৈশাখ বলতে বিশেষ করে মনে হয় নতুন পাঠ ভাঙা সুতির শাড়িতে সেজে ওঠা। মাথায় বেল বা জুঁই ফুলের মালাতে গ্রীষ্মের সন্ধ্যাতে স্নিগ্ধ রূপ।
অনবদ্য শাড়ি
বাংলার টাঙ্গাইল এবং বালুচরী শাড়িতে এখন নতুন চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশী ঢাকাইয়ের প্রচণ্ড ক্রেজ বরাবরই, এখন ওই ধরনের কাজ টাঙাইলের উপরেও প্রাধান্য পাচ্ছে।
চান্দেরি শাড়ি সবসময়ই সকলের হট্ ফেভারিট কারণ এটি খুব হালকা শাড়ি এবং পরেও আরাম। এছাড়া সিল্কের চাহিদা সারা বছর ধরেই রয়েছে। বাটিকে সিল্ক, আসাম সিল্ক, কাঁথা স্টিচের সিল্ক, ভাগলপুরী সিল্ক, মটকা, কোসা, ঢাকাই জামদানী, নওভারি সিল্ক, পচমপল্লী, বোমকাই, পৈঠানী ইত্যাদি সব শাড়িরই চাহিদা বাড়ে বিশেষ করে এই সময়ে এবং পুজার সময়। এবার কলমকারি এবং পটোলা শাড়ি ক্রেতাদের কাছে খুব প্রিয়, কারণ অনেক নতুন ডিজাইন নিয়ে আসা হয়েছে এই শাড়িগুলিতে।
মাহেশ্বরী, জুট সিল্ক, খেশ, ভেঙ্কটগিরি, ওয়াল কলাম, জারদৌসী, প্রিন্টেড সিল্ক তো রয়েইছে, ওপারা ও দোপিয়ন সিল্কেরও ভালোই চাহিদা।। জরজেটের উপর বেনারসীর কাজও এখন ফ্যাশনে ইন। এই শাড়িগুলি বেনারসী সিল্ক এর থেকে অনেকটাই হালকা, সুতরাং গরজিয়াস লুকটা বহাল থাকছে অথচ পরেও আরাম।
যারা গরমের জন্য খুব ভারী বা হেভি কাজ করা শাড়ি অ্যাভয়েড করতে চান, তারা অনায়াসে বেছে নিতে পারেন লিনেন শাড়ি, কোটা শাড়ি অথবা সাউথ কটন, স্বর্ণ কাতান, সিল্ক-কটন ইত্যাদি।
‘উত্তরা ক্রিয়েশন্স’ বুটিকের কর্ণধার তিথি মজুমদার সারা বছরই শাড়ির সঙ্গেই ওঠাবসা করেন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উনি শাড়ি কালেক্ট করেন এবং কাস্টমারদের চাহিদা পূরণ করেন। তবে ফ্যান্সি নয় তাঁর লেনদেন সবই পিওর জিনিসের উপর নির্ভর করে। ফ্যাশান ট্রেন্ড নিয়ে জানালেন বিস্তারিত ভাবে। তসর, বিষ্ণুপুর সিল্ক বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন। তাছাড়াও হ্যান্ডলুম লিনেন শাড়ি সকলেরই পছন্দ এবং এর চাহিদাও তুঙ্গে। তসর বা সিল্কের উপর হ্যান্ডপেইন্ট অনেকে লাইক করেন। সারা শাড়িতে পেইন্ট অথবা পাড় এবং আঁচল। কাঁথা কাজের ডিমান্ড অসম্ভব বেড়েছে এখন। আগের থেকে ডিজাইনেও অনেক রদবদল এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের তাঁতিরা যেভাবে এখন লিনেন শাড়ি তৈরি করছেন এবং তাতে তাঁতের এবং জামদানী ঢাকাইয়ের ডিজাইন দিচ্ছেন, তাতে এই শাড়িটি এখন খুবই পপুলার হয়ে উঠেছে। কাঁথার কাজে একুশ অথবা বাইশ সুতোর কাজের টপ ডিমান্ড রয়েছে। বাইশ রকম রঙের সুতোয় সারা শাড়িতে কাজ, নকশা করা হয়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিমান্ড বেড়েছে বিষ্ণুপুরী কিংবা সোনামুখী কাতান সিল্কের। এগুলোর উপর হ্যান্ডপেইন্ট, তেলেঙ্গানার কলমকারি, ব্লক প্রিন্ট, মধুবনী প্রিন্ট ইত্যাদির অসম্ভব চাহিদা সারা ভারতবর্ষ জুড়ে। বিষ্ণুপুরী সিল্কের চাহিদা বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে এর হালকা মেটেরিয়াল এবং উজ্জ্বল রং।
তিথি জানালেন এগুলো ছাড়াও ব্যাঙ্গালোর সিল্কের উপর বা বিষ্ণুপুরী কাতানের উপর আড়ি কাজ খুব পপুলারিটি গেন করছে কয়েক বছর ধরেই। ওনার কাছেও এই শাড়ির প্রচণ্ড ডিমান্ড রয়েছে। সম্পূর্ণ হাতে করা হয় এই কাজ। এছাড়াও আছে গাছি তসর যেগুলি সাধারণ তসরের তুলনায় অনেকটাই দামি। বুটিক থেকে শাড়ি কেনাকাটা মূলত অনলাইন-এ এবং এগজিবিশন-এর মাধ্যমে, যেটা আজকাল বহু শাড়ি অনুরাগীরাই খুব প্রেফার করছেন। এতে দোকানের ভিড় ঠেলার প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বসেই পাওয়া যাবে পছন্দের শাড়ি।