বাচ্চার সাথে সময় কাটানো আজকালকার দিনে খুবই প্রয়োজনীয়।কারণ ছোটো পরিবারে বাচ্চারা খুব একা একা বড়ো হয়৷ আগে বেশিরভাগ পরিবারই ছিল যৌথ। তাই ভাই বোনের সান্নিধ্যে শৈশব কাটত দারুন মজায়। কিন্তু এ যুগের বাচ্চাদের শৈশবের আনন্দগুলোকে তো উপেক্ষা করা যায় না। তাই মা বাবা হিসেবে তাদের কোয়ালিটি সময় দেওয়া একান্ত জরুরি। এটা যারা পালন করবেন তাদের বাচ্চারা নি:সন্দেহে সুস্থ স্বাভাবিক শৈশব পাবে।

সাধারনত: দেখা যায় দুভাবে বাচ্চাকে আমরা সময় দিই। কোয়ান্টিটি সময় আর কোয়ালিটি সময়। কিছু মা বাচ্চার বিষয়ে অতি মনোযোগী৷ তারা সারাক্ষণ বাচ্চার পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন। তাকে চান খাওয়া করানো, ঘুম পাড়ানো এসব কাজে তার সময় চলে যায়। কিন্তু বাচ্চার সাথে বসে গল্প করা, খেলাধূলো করা, তার সাথে বসে একসাথে খাওয়া, বই পড়ে শোনানো, কোনোটাই করে উঠতে পারেন না।বা বলা ভালো করকা যে কা সুফল হতে পারে ,সেই বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন৷ ফলত: বাচ্চা সারাদিন মা থাকা সত্বেও একাকিত্বে ভোগে।

চেষ্টা করুন বাচ্চাকে কোয়ান্টিটি নয় কোয়ালিটি সময় দিতে।অর্থাত যতটুকু সময়ই বাচ্চা আপনার কাছে থাকুক না কেন, সে যেন সেটা এনজয় করে৷ এর ফলে দেখবেন আুনি কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার পর, বাচ্চা অপেক্ষা করে থাকবে আপনার সাথে ওই বিশেষ সময়টুকু কাটানোর জন্য। আপনার সান্নিধ্য সে খুবই পছন্দ করতে শুরু করবে।

প্রাথমিকভাবে একটা প্রপার প্ল্যানিং করে নিন কীভাবে আপনার দৈনিক শেডিউল থেকে বাচ্চার জন্য বেশ খানিকটা সময় বের করে নিতে পারবেন৷আজকালকার নিউক্লিয়ার পরিবারে, বাচ্চা তার প্রাপ্য আনন্দটুকু পেতে আঁকড়ে ধরে তার মা বাবাকে। সেই সময়টুকু না পেলে সে অচিরেই আপনাকে অবজ্ঞা করা শুরু করবে তার জমে থাকা ক্ষোভ থেকে। এই পর্যায়ে যদি বাচ্চাকে সময় দেবার বিভিন্ন উপায় না ভাবেন, ক্রমশ: দূরত্ব সৃষ্টি হবে মা আর সন্তানের। একটা সময়ের পর সন্তানকে কাছে পেতে চাইলেও সন্তান কাছে আসার তাগিদ অনুভব করবে না।

কী ভাবে সময় কাটাবেন বাচ্চার সাথে?

বাচ্চার সাথে সময় কাটানোর জন্য সারাদিন কাছ ঘেঁষে থাকার প্রয়োজন হয় না। যদি দিনে একঘন্টাও কাটান তাও চলবে স্বচ্ছন্দে। কিন্তু সেই সময়টা হতে হবে নিরবিচ্ছিন্ন। তাতে মোবাইল, ল্যাপটপ আর টিভি-র প্রবেশ নিষেধ।

  • ওদের সাথে খেলা করুন। দিনে একটা নির্দিষ্ট সময় রাখুন যেখানে বিভিন্ন রকম খেলা খেলুন ওদের সাথে। তা সে ইন্ডোর বা আউটডোর যেকোনো রকম খেলাই হতে পারে।
  • ওদের সাথে বসে পাজল করুন, বিল্ডিং ব্লক দিয়ে বাড়ি বানান, পুরোনো কাপড় দিয়ে পুতুলের জামা কাপড় ডিজাইন করুন, ফুটবল ক্রিকেট খেলুন। দেখবেন, কত রকম অজানা তথ্য জানবেন আপনার বাচ্চার সম্পর্কে। ওর সাথে আপনার বন্ডিংটাও ক্রমশ: শক্তপোক্ত হবে।
  • একসাথে বই পড়ুন। এটা আরেকটা দারুন উপায় বাচ্চার সাথে কোয়ালিটি সময় কাটানোর। বাচ্চার সাথে বই পড়লে ওর মনে ইমোশনাল সিকিউরিটি তৈরি হয় যা বাচ্চার পজিটিভ চিন্তাশক্তির সহায়ক। ঘুমের আগে এটা করলে খুব ভালো হয়। বাচ্চা শুধু যে বইকে ভালোবাসতে শুরু করবে তা নয়, ওর মধ্যে পড়ার অভ্যাসও তৈরী হবে যা ওর ভবিষ্যতে সুঅভ্যাস গড়ে তুলবে। অনেকসময় মুখরোচক স্ন্যাকস সহযোগেও বই পড়তে পারেন। এতে বাচ্চা খুব আকর্ষিত হবে।
  • একসাথে বসে ড্রইং বা ক্র্যাফ্টের কাজ করুন। বাচ্চা অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে আপনার কাছ থেকে।
  • একসাথে বিভিন্ন সহজ রেসিপি রান্না করতে পারেন। একসাথে ঝালমুড়ি বানান, কেক বানান। এসবের মধ্যে বাচ্চা যে শুধু আপনার সান্নিধ্য পাবে তা নয়, ওর মধ্যে অনেক ধরনের ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনা আত্মপ্রকাশ করবে। বাচ্চার মধ্যে পারিপার্শিক সমন্ধে জ্ঞানও বাড়বে।
  • একসাথে গাছের পরিচর্যা করুন। এখনকার ফ্ল্যাটবাড়িতে বাগান করা কষ্টকর হলেও ছোটো ছোটো টবে গাছ রাখতে পারেন। বাচ্চা ও আপনি দুজনে মিলে তার যত্নআত্তি করুন। গাছপালা সম্পর্কে ওর মনে একটা পজিটিভ চিন্তাভাবনা তৈরী হবে।
  • মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ দিন ওকে। আমরা বেশীরভাগ সময়ে বাচ্চাদের উপহার দেওয়া বলতে বুঝি চিপস, চকোলেট, খেলনাপাতি। কিন্তু ওদের কাছে তার থেকে ঢের প্রিয় হল আপনার সাথে সময় কাটানো।
  • মাঝে মাঝে দুজনে বেরিয়ে পড়ুন কোথাও বেড়াতে। সামনা সামনি পার্ক হলেও চলবে। দেখবেন ওর স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করবে আপনার সাথে কাটানো সময়।
  • বাড়িতে বাচ্চার বন্ধুদের ডেকে গল্পের আসর বসান। সেই ছোটোবেলার দিনগুলোতে ফিরে যান। দেখবেন, আপনি নিজেও আপনার শৈশব এভাবেই কাটিয়েছেন। একা একা কার্টুন দেখার থেকে বা গেমস খেলার থেকে ঢের মজার সবার সাথে বসে গল্প শোনা।
  • নিজের কথা বা কাজ একটু থামিয়ে যদি ওর কথা শোনেনই খুব ক্ষতি হবে কি? একবার যদি শোনেন, ওর সেই ভীষণ ভাললাগার মুহূর্তটাই মনে চিরস্থায়ী হয়ে যাবে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...