ঈর্ষা একটি সাধারণ বিষয়। সবার জীবনে ঈর্ষার প্রভাবও পড়ে কমবেশি। কেউ হয়তো এই সত্যিটা স্বীকার করে নেন, কেউ আবার স্বীকার করার ক্ষমতা রাখেন না। সে যাই হোক, ঈর্ষার কুপ্রভাব পড়ে শরীর-স্বাস্থ্যের উপর এবং তা অবশ্যই ক্ষতিকারক।
এখন কারওর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, খুব সাধারণ ভাবে ঈর্ষা বলতে আমরা কী বুঝব?
যখন কারও উন্নতি অথবা সাফল্যের কথা শুনে আমাদের রাগ হয় কিংবা যখন কারও অসাফল্য বা বিপর্যয়ের কথা শুনে আমাদের আনন্দ হয়, তখন সেই অবস্থাটিকে বলা হয় ঈর্ষা।
জন্মের পর থেকে একটি শিশুর মধ্যে মূলত তিনটি অনুভতি থাকে--- ভয়, রাগ এবং ভালোবাসা। অর্থাৎ, এসব তার সুস্থতার লক্ষণ। কারণ, যে-কোনও সুস্থ-স্বাভাবিক শিশু মাত্রেই ভয়, রাগ এবং ভালোবাসার অনুভতি থাকবে। কিন্তু, যেই বয়স বাড়বে, তখনই খুব স্বাভাবিক ভাবে শিশুর মনে ঈর্ষার জন্ম নেবে। যেমন অন্য কোনও শিশুর কোনও খাবার পোশাক কিংবা খেলনা দেখে বা নিজে না পেলে প্রথমে রাগ হবে এবং তারপর অবচেতন মনে ঈর্ষার জন্ম নেবে।
সাধারণ ভাবে একটি শিশুর মনে ঈর্ষা জন্ম হয় দেড় বছর বয়স থেকে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় জেনেটিক বা বংশগত কারণেও শিশুর মনে ঈর্ষা জন্ম নেয়। অর্থাৎ, অপরাধ প্রবণতার জন্য যেমন ক্রোমোজোম বিশেষ ভূমিকা নেয়, ঠিক তেমনই বংশগত ধারা বা জিনও দায়ী থাকে ঈর্ষার জন্য। আর এই ঈর্ষা প্রথমে আসে পরিচিত বলয় থেকে। অবশ্য বয়স এবং আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঈর্ষার রূপও বদলাতে থাকে। শৈশব এবং কৈশোরে অনেকের ভালো কিছু না-পাওয়ার দুঃখে প্রথমে রাগ এবং পরে ঈর্ষা হয় সাময়িক ভাবে। এই বয়সে মন বিশেষ জটিল থাকে না বলে ঈর্ষা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈর্ষার রূপ বদলে যায়।
আসলে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চায় মনে-মনে। আর এই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের ইচ্ছে থেকেই প্রকট হয় ঈর্ষা। কার্যত, এটা একটা সর্বগ্রাসী ভাবনা, একটি ক্ষতিকারক প্রবৃত্তি। ঈর্ষা বা পরশ্রীকাতরতা সভ্যতার আদিম পর্বেও ছিল, এখনও আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে। আর সারা পৃথিবীতে যত অপরাধ ঘটে, তার মূলে বেশিটাই থাকে এই ঈর্ষা বা পরশ্রীকাতরতার প্রবৃত্তি।