সম্পর্কের বন্ধনকে আরও বেশি করে দৃঢ় করে ‘বিয়ে’। একটা নতুন জীবনের শুরু, যেখানে জীবনের পরিবর্তনের সঙ্গে যোগ হয় বিবিধ দায়িত্বের বোঝা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিয়ের দিনটার জন্যেই মাতামাতি বেশি থাকে। বিয়ের পরের সময়টার গুরুত্ব যে অনেক বেশি, তা নিয়ে মাথাব্যথা সকলেরই কম থাকে। আসলে বিয়ের দিনের অনুষ্ঠান পর্বকে চাকচিক্যে ভরিয়ে তোলাটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়।

অথচ বিয়ের দিনের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত পাত্র এবং পাত্রী উভয়েরই আসন্ন বিয়ে নিয়ে থাকে চাপা উত্তেজনা। তাদের কাছে শুধুমাত্র বিয়ের দিনটাই নয়, তার পরের জীবনটা নিয়েও থাকে বহু জল্পনাকল্পনা ও উদ্বেগ। যা মনে রয়েছে তা বাস্তবায়িত হয়ে উঠবে কিনা, এমন জিজ্ঞাসা থেকেই জন্ম নেয় উত্তেজনা। উভয়ের ক্ষেত্রেই নতুন পরিবার এবং নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন থেকেই যায়। সুতরাং বিয়ের আগে থেকেই যদি নিজেকে উপযুক্ত ভাবে গড়ে তোলা যায় তাহলে অতটা টেনশনে থাকার আশঙ্কা থাকে না। নিজেদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করার জন্যে যেমন রয়েছে প্রি-ম্যারেজ কাউন্সেলিং তেমনই ঘরোয়া কিছু উপায়ও রয়েছে টেনশন কাটাবার জন্যে।

বিদেশের মতো ভারতেও এখন ডিভোর্সের হার এতটাই বেড়ে গেছে যে, এখানেও প্রি-ম্যারেজ কাউন্সেলিং-এর প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেড়ে গেছে।

প্রি-ম্যারেজ কাউন্সেলিং-এর লাভ

১) একে অপরকে জানার এবং বোঝার সুবিধা।

২) বিয়ের আগেই জীবনসঙ্গীকে ভালো ভাবে পরখ করে নেওয়ার একটা সুযোগ পাওয়া যায়।

৩) পাত্র-পাত্রী উভয়েরই প্রয়োজনীয়তা উভয়েরই সামনে খোলা পাতা হয়ে দাঁড়ায়।

৪) আসন্ন বৈবাহিক জীবনে আসে পরিপূর্ণতা।

৫) ভবিষ্যতে মতভেদের কারণে কোন কোন বিষয়ে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে, সেটা প্রথম থেকেই চর্চা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।

৬) বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনা অনেকাংশে কম হয়ে যায়।

প্রি-ম্যারেজ কাউন্সেলিং-এর সময় পাত্র-পাত্রী উভয়ের মধ্যে কী কী খামতি রয়েছে, দুজনের ব্যক্তিত্বের তফাত কতটা, একে অপরের কাছে কী ধরনের প্রত্যাশা রাখে, খোলাখুলি দুজনে দুজনের কাছে মনের কথা খুলে বলতে পারবে কিনা, নিজেদের জীবন এবং কেরিয়ার সম্পর্কে তারা কী ভাবছে, তাদের আর্থিক স্থিতি, সেক্স ও সন্তান নিয়ে তাদের কী ভাবনা এবং ভবিষ্যতে মতবিরোধ ঘটলে কে কীভাবে পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম, এমন নানা বিষয়ে বিশেষ করে জোর দেওয়া হয় ।

এই ধরনের বহু সমস্যা নিয়েই কাউন্সেলিং করা হয়ে থাকে, ফলত বিয়ের আগেই পাত্র-পাত্রী অনেকটা টেনশনমুক্ত হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারে।

বাইরের পেশাগত সাহায্য ছাড়াও ঘরোয়া কয়েকটি উপায়ও রয়েছে বিয়ের আগের টেনশন কাটাবার জন্যে। বিয়ের দিনটির চাপ ছাড়াও সারা জীবনের সম্পর্ক যেখানে জুড়তে চলেছে, সেখানে প্রয়োজন হয় বাড়িতে থেকেও ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের তৈরি করা। মেডিটেশন, মাসাজ, যোগা, বিভিন্ন হবিতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেও টেনশন অনেকটাই কমানো যায়। যেমন–

মিউজিক – ধীর মধুর সুদিং মিউজিক মনের চঞ্চলতা কমিয়ে তাকে শান্ত করতে সক্ষম। শরীরের মধ্যে জমে থাকা টেনশন কম করে জীবন এবং আত্মাকে সজীব করে তুলতে সাহায্য করে মিউজিক।

ব্রিদিং এক্সারসাইজ – টেনশন কমাতে বাড়িতেই ব্রিদিং এক্সারসাইজ করলে খুব ভালো লাভ পাওয়া যায়। শরীরের পেশিগুলোকে উত্তেজনামুক্ত করতে, সারাদিনে যে-কোনও সময়েই এই ব্রিদিং এক্সারসাইজ করা যায়। খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি এটি কাজ করে।

মেডিটেশন – মনের মধ্যে ক্রমাগত আসতে থাকা চিন্তাধারাকে মেডিটেশন কনট্রোল করে মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। ফলে মনে স্বচ্ছতা আসে। সারা দিনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মেডিটেশন করতে পারলেই যথেষ্ট।

শরীরের এক্সারসাইজ – শারীরিক শ্রম স্ট্রেস কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে। শ্রমের কারণে শরীরে এনডরফিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যেটি শরীরকে রিল্যাক্স রাখতে সাহায্য করে।

জীবন উপভোগ করুন – নিয়মে আবদ্ধ থেকেই যে শুধু রিল্যাক্স করা যায়, এমনটা মনে করা ঠিক নয়। নিজেকে কিছুটা হলেও ছাড় দেওয়া উচিত। বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে জীবনটাকে উপভোগ করা উচিত। বর্তমানকে উপভোগ করার নামই রিল্যাক্স করা। ভবিষ্যতে কী হবে এবং অতীতে কী হয়ে গেছে, তাই চিন্তা করে বর্তমানের মুহূর্তকে নষ্ট করা উচিত নয়।

পারিপার্শ্বিক আবহ – কী পরিবেশে, কোথায় সময় কাটাচ্ছেন এটা যে-কারওর জন্যেই একটা ভাইটাল পয়েন্ট। পারিপার্শ্বিক স্থিতি মানুষের মন, চিন্তাধারাকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। যে-জায়গায় অথবা যাদের সঙ্গে থাকলে মন প্রফুল্ল থাকবে, বিয়ের আগে তেমন পরিবেশই বেছে নেওয়া উচিত পাত্র অথবা পাত্রীর।

নিজেদের রিল্যাক্স রাখতে গেলে আরও একটা খেয়াল রাখা জরুরি। অন্যের অযাচিত প্রশংসা অথবা কুৎসা কোনওটাই গায়ে মাখলে চলবে না। অন্যে কী বলবে অথবা ভাববে এই নিয়ে কুন্ঠাবোধ করা অনুচিত। এছাড়াও নাচ, এরোবিক্স, গান করে, শপিং করে, বই পড়েও টেনশন দূর করা যায়। মূল কথা হল, বিয়ের আগে যেভাবে পাত্র অথবা পাত্রী কমফর্ট ফিল করবে সেই ভাবেই নিজেকে চালিত করতে পারলেই মানসিক ও শারীরিক উত্তেজনামুক্ত থাকা সম্ভব হবে।

 

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...