একটা নতুন বছর শুরু হয়ে গেল। তাই এবার পুরোনো-কে বদলে ফেলার পালা নতুনত্বের ছোঁয়া আপনার ইন্টিরিয়র ডিজাইন-এও নিয়ে আসুন। বদলে ফেলুন পর্দা থেকে কুশন কভার। কীভাবে ঘরে কয়েকটা বদল আনলে  ঝলমলিয়ে উঠবে আপনার ঘর, এখানে তারই টিপ্স দেওয়া হল।

বসার ঘরের অন্দরসাজ আমাদের রুচির প্রথম বহিঃপ্রকাশ। যেহেতু বসার ঘর বাড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই সফিস্টিকেশনের সঙ্গে সঙ্গে কমফোর্টের বিষয়টা অত্যন্ত জরুরি।
আপনি যদি নতুন বাড়ি বানান কিংবা কেনেন, তাহলে চেষ্টা করুন যাতে আপনার বাড়ির ড্রইং, ডাইনিং রুম দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে হয়। এতে শীতের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে রোদ আসার ফলে ঘর গরম থাকবে এবং গরমের সময় বিকেল থেকে সন্ধ্যার দিকে ঘরে ঢুকবে দক্ষিণের খোলা হাওয়া, যা খুবই আরামদায়ক।
ঘরের পরিবেশ
বসার ঘরকে বড়ো দেখানোর জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ড্রইং-ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা একসঙ্গে করা হয়। ডাইনিং ও ড্রইং স্পেস আলাদা করার জন্য দুটি জায়গার মাঝখানে নানা রকমের পার্টিশন, বুক শেলফ বা ক্যাবিনেট দিতে পারেন।
রঙের সঠিক ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে পারে ঘরের সৌন্দর্য। মনে রাখবেন উজ্জ্বল ও হালকা রং ঘর বড় দেখাতে সাহায্য করে। যদি ঘরে সূর্যের আলো কম ঢোকে তাহলে কোনোভাবেই দেয়ালে গাঢ় রং করাবেন না। ঘর আরো অন্ধকার দেখাবে। যদি গাঢ় রং করাতে চান তাহলে একটি দেয়ালে কমলা, লাল, হালকা নীল রং করে অন্য দেয়ালগুলোয় নিউট্রাল রং করান।

পর্দা

কনট্রাস্ট রঙের ব্যবহারে ঘরের স্যাঁতসেঁতে এবং মনমরা ভাব দূর হবে। কালারফুল এবং ব্রাইট মুড আনার জন্য কনট্রাস্ট রঙের কুশন কভার অথবা পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। পর্দার ডিজাইন অনেকটাই নির্ভর করে জানালা-দরজার ডিজাইনের ওপর। ছোট ফ্ল্যাটে বেশি ভারী পর্দা ব্যবহার না করাই ভালো। রিচ ফেব্রিকের পর্দা লাগালে ঘরে একটি আলাদা আমেজ আসে।

  • পর্দা যতটা সম্ভব সিলিংয়ের থেকে স্বল্প দূরত্বে রাখুন
  • ইচ্ছে করলে ব্লাইন্ড এবং পর্দা দুই-ই লাগাতে পারেন
  • জানলা বড়ো হলেও ক্ষতি নেই। বেশি কুঁচিওয়ালা পর্দা ঝোলান
  • পর্দা বাছার সময় এমন রং-ই বাছুন যা আপনার ঘরের রঙের সঙ্গে মানানসই হবে
  • আসবাবের সঙ্গেও যেন পর্দার একটা সামঞ্জস্য থাকে। বস্তুত একটা ঘরে চারটি জিনিসের ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। মেঝে, সিলিং, দেয়াল ও আসবাব। এর মধ্যে যে-কোনও একটাকে বেছে নিন হাইলাইট করার জন্য। বাকিগুলো শুধু সাপোর্টিং রোল প্লে করবে
  • ঘরে কাঠ-কে গুরুত্ব দেবেন না ব্লাইন্ডস-কে, সেই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে– কতটা প্রাইভেসি চান, সেটার ওপর ভিত্তি করে।

আসবাব ও টুকিটাকি

এখন মেঝে নিয়েও নানা রকমের এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। সেহেতু দেয়ালের রং, ফার্নিচার, পর্দা, সোফা কভারের মতো মেঝে বারবার বদলানো সম্ভব নয়। তাই আপনার পছন্দ অনুযায়ী মেঝে বেছে নিন। যদি ফার্নিচার হাইলাইট করতে চান, তাহলে নিউট্রাল মেঝে রাখাই ভালো।
আর মেঝেতে কার্পেট পাতলে ঘর অনেক বেশি এলিগেন্ট লাগে। বাজেট কম থাকলে শতরঞ্জি ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের কর্নারগুলোতে রাখতে পারেন ইনডোর প্লান্টস বিভিন্ন ধরনের ল্যাম্পশেড ও ফুলদানি।
ঘরের ইন্টেরিয়র প্ল্যান করার আগে লাইটিংয়ের ব্যবস্থার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। আলো-ছায়ার ম্যাজিক তৈরি করতে চাইলে সাদা, লাল, কমলা, গোলাপি বিভিন্ন ধরনের লাইট ব্যবহার করুন। আর বিশেষ অংশ হাইলাইট করার জন্য স্পট লাইট লাগান।
ঘরের আসবাব, পর্দা, আপহোলস্ট্রি সব কিছু ম্যাচ করানোর কোনও দরকার নেই। এক্সপেরিমেন্ট করুন নানা ধরনের রং, টেক্সচার নিয়ে। এক এক ঘরে এক এক ধরনের অন্দরসাজ থাকলে বরং বাড়ির ক্যারেক্টারটা ভালো বোঝা যায়।
মনে রাখবেন, বাড়িটা মিউজিয়াম নয়
বাড়িটা কেবল সাজানোর জন্য হলে মুশকিল, সেখানে থাকাটাই আপনার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। অতিরিক্ত সাজালে বাড়িটা মিউজিয়াম বা আর্ট গ্যালারির মতো দেখতে লাগবে। তাই বাড়ি সাজাতে ছিমছাম স্টাইল বেছে নিন। ঐতিহ্যবাহী জিনিস রাখলেও পরিমিতিবোধ জরুরী। দুনিয়ার জিনিস এনে জড়ো করবেন নাী। তার বদলে একটা নির্দিষ্ট থিম বা প্যাটার্ন ফলো করুন। সেই থিম সম্পর্কিত জিনিস দিয়ে ঘর সাজান।

কয়েকটি জরুরি বিষয়

 ইদানীং প্রতি বছরের শুরুতেই গৃহসজ্জার নানা দিক, যেমন দেওয়ালের রং, আসবাব, পর্দা ইত্যাদি বিষয়ে লেটেস্ট ট্রেন্ডের ঘোষণা হয়ে যায়। তবে তার পিছনে ছুটে অযথা শ্রম আর চিন্তাভাবনা ব্যয় করতে যাবেন না। ট্রেন্ড প্রতি বছর বদলায়, আপনিও কি সেই অনুযায়ী গৃহসজ্জায় বদল নিয়ে আসতে পারবেন? যদি না পারেন, তা হলে ঘরের জন্য এমন সজ্জা বাছুন যা আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।

  •  সোফার রঙের সঙ্গে হুবহু একই রঙের কুশন কভার কেনার ভুল করবেন না। এতে ঘরটা খুব বিসদৃশ দেখাবে
  • আগে ভেবে নিন কোন ধরনের আসবাব কিনবেন, তার পর বাছুন দেওয়ালের রং। আগেই দেওয়াল রং করিয়ে ফেললে মনের মতো আসবাবের খোঁজে পরে অনেক ঘুরতে হবে।
  • সাধারণত লিভিং রুম-এ অনেক রং ও প্যাটার্ন থাকেই। দেয়ালের রং, পর্দার ডিজাইন, দেয়ালে টাঙানো ছবির রং –সেগুলোর মধ্যে থেকে রং বেছে নিয়ে কুশনের রঙের সঙ্গে কালার ব্যালান্সিং করুন। খেয়াল রাখুন রংটা যেন অন্যান্য জিনিসের রংকে কমপ্লিমেন্ট করে, বিরোধিতা না করে
  •  ঘরে ট্র্যাডিশনাল লুক রাখতে চাইলে, কুশনের সংখ্যা যেন জোড় সংখ্যায় থাকে। যদি গৃহসজ্জা খুব হাল ফ্যাশনের হয়, তাহলে কুশনের সংখ্যা বিজোড় সংখ্যায় রাখুন।
  •  ঘরের মাপ না নিয়ে ফার্নিচার কিনবেন না, তাতে নানা অসুবিধে হয়। দরজা দিয়ে ঢুকবে না আসবাব, চোট লেগে যাবে। অযথা বড় জিনিস কিনে ঘর বোঝাই করবেন না।
  • কুশন কভারের ডিজাইন একইরকম না রেখে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে রাখুন। কোনওটায় থাক সলিড কালার, কোনওটা হোক প্যাটার্নধর্মী।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...