আজকাল বেশির ভাগ মহিলারাই সংসারের খরচের অনেকটাই দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ার্কিং উয়োম্যান হলে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের কথাও ভাবাটা জরুরি। বিশেষ করে আপনি যখন একজন দায়িত্বশীল মা। তাই আপনার সুস্থ থাকা বিশেষ  প্রয়োজন। প্রথমেই আপনার আয়ের একটা অংশ নিজের স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করুন। বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়ই যে আগামীদিনে, বিশেষ করে সামনের দু’বছর পরিস্থিতি খুবই কঠিন হতে চলেছে? এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে গেলে আপনাকেও খরচপত্র কমাতে হবে, সেই সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে এমন ক্ষেত্র, যেখানে টাকা বিনিয়োগ করা আবশ্যক।

কীভাবে খরচে রাশ টানবেন ?

বাহুল্য একেবারে বাদ দিতে ববে জীবন থেকে। শুধু তটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খরচ করুন।খাওয়াদাওয়ায় বিলাসিতা চলবে না, বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে শিকেয় তুলে রাখুন। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে জামাকাপড়ও কিনবেন না। কাটছাঁট করুন উপহারের বাজেটেও।সোশ্যালাইজিং অনেকটাই কমেছে করোনার কারণে।প্রয়োজনে শুধু ফোনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখুন। বাইরে থেকে হুটহাট খাবার আনানো বা অনলাইনে হুজুগে পড়ে কেনাকাটা করবেন না। অফিসের কাজে বাইরে গেলেও যথাসাধ্য কম খরচ করুন।

রূপচর্চার ক্ষেত্রেও বাজেট কমান।পার্লার নয়, ভরসা রাখুন প্রথাগত ঘরোয়া সমাধানে। সুস্থ থাকুন, ফল-সবজি খান বেশি করে। ব্যায়াম করুন। শরীর-মন সুস্থ থাকলে পরিস্থিতির সঙ্গে অনায়াসে লড়া যাবে। পরিবারের সঙ্গে থাকুন, ভালো থাকুন।আর সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটা প্ল্যানিং ও অবশ্যই করে নিন কোনও পেশাদারের সাহায্যে।

একটা ব্যাপারে অধিকাংশ ফিন্যান্স প্ল্যানারই একমত হবেন যে, বর্তমানে সরকার যে যে খাতে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, তার দায়ভারও সম্ভবত আগামীদিনে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী শ্রেণির ঘাড়েই চাপতে চলেছে।

তাই খুব সাবধানে পা ফেলুন, বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার তার বেশি খরচ করবেন না। আপনি যে-সংস্থাতেই চাকরি করুন, সেখানে যত ভালো মেডিক্লেম কভারেজ থাক না কেন, চাকরিতে ঢুকেই ব্যক্তিগত মেডিক্লেম করাটা একান্ত জরুরি। হঠাৎ কর্মহীন হলেও অসুবিধে হবে না। মনে রাখবেন, যত কম বয়সে মেডিক্লেম করবেন, তত বেশি সুবিধে পাবেন। সেই সঙ্গে নিয়মিত তা টপ আপ করাও জরুরি।ভারতীয়দের মধ্যে মেডিক্লেম বিষয়ে একটা উদাসীনতা কাজ করে, যেহেতু তার রিটার্নটা চোখে দেখা যায় না। দ্বিতীয় যে-সমস্যাটা হয়, তা হচ্ছে ক্লেম করার সময় কোম্পানিগুলি নানা সমস্যা তৈরি করে। নিয়মকানুনগুলো গ্রাহক হিসাবে আপনার জানা না থাকলে, অনেক সময়েই পুরো টাকাটা মেলে না।তাই বিষয়গুলি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন।

মেডিক্লেইম আর স্বাস্থ্যবিমা কি এক?

মেডিক্লেইম আর স্বাস্থ্যবিমা এক নয়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই এই ফারাক জেনে বিমা কেনেন না। আমরা স্বাস্থ্যবিমা আর মেডিক্লেইমের মধ্যে সাধারণত ফারাক করি না। তাই আসুন জেনেনি কোনটা কী।

মেডিক্লেইম

  • মেডিক্লেইম অর্থাৎ আপনি হাসপাতালে ভর্তি হলে তবেই চিকিৎসা বাবদ খরচের টাকা পাবেন। অ্যাক্সিডেন্টের জন্য ভর্তি হলেও পেতে পারেন এবং কিছু নির্দিষ্ট অসুখের চিকিৎসার খরচ পেতে পারেন।
  • সর্বোচ্চ কত টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন তা বিমা কেনার সময়ই নির্ধারিত হয়ে যায়।
  • বিমার নির্ধারিত অঙ্ক কত দিনের জন্য কিনছেন, আপনার বয়স আর কোথায় থাকেন তার উপর প্রিমিয়ামের অঙ্ক নির্ধারিত হয়।
  • ক্যাশলেস ক্লেম হলে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে, পরে বিল দিয়ে দাবি করতে পারেন।
  • আয়কর ৮০-ডি ধারায় ছাড় পেতে পারেন।

স্বাস্থ্যবিমা

  • এই বিমার কভারেজ মেডিক্লেমের থেকে বড়ো, তাই প্রিমিয়ামও তুলনায় বেশি।
  • অনেক বেশি রোগের ক্ষেত্রে এই বিমার কভারেজ মেলে।
  • কোনও ক্লেইম করা না হয়ে থাকলে রিনিউয়ালের সময় বোনাস পাওয়া যায়।
  • এই বিমার ক্ষেত্রে আপনি যদি চিকিৎসার আংশিক খরচ নিজে বহন করার অঙ্গীকার করেন তাহলে প্রিমিয়ামে কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়।
  • এতে হাসপাতালে থাকাকালীন দৈনন্দিন খরচের জন্য আপনি পূর্ব নির্ধারিত হারে নগদ পাবেন।
  • হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও যে-রোগের কারণে হাসপাতাল ভর্তি হয়েছিলেন তার চিকিৎসার খরচও পাওয়ার সুযোগ আছে।
  • স্বাস্থ্যবিমা অনেক বেশি সুবিধার এবং এর টাকার অঙ্কের কোনও ঊর্ধসীমাও নেই।
  • এক্ষেত্রেও আয়করে ৮০-ডি ধারায় ছাড় পাওয়া যায়।

কর্মরতা হলে, মনে রাখুন একমাত্র সঠিক ফিন্যান্স প্ল্যানই আপনাকে বিপদের দিনে সাহায্য করতে পারে। নতুন আর্থিক বছর শুরু হয়েছে সদ্য, তাই আপনিও আর সময় নষ্ট না করে সঠিক দিশায় পা বাড়ান।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...