চুলের সব থেকে বড়ো শত্রু হল সূর্যের জোরালো রশ্মি। সরাসরি চুলে রোদ লাগলে চুলের রং হালকা হতে থাকে। অনেকক্ষণ রোদে থাকতে হলে হাইলাইট করা চুল অক্সিডাইজ হয়ে যায়, যার ফলে চুলের রং বদলে যেতে পারে এবং সেটা পছন্দসই না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং, চুল হাইলাইট করা থাকলে, যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন অনেক বেশি হয়।

শুধুমাত্র সোডিয়াম লরেল সালফেট মুক্ত শ্যাম্পুই ব্যবহার করুন। কালার করা অথবা হাইলাইট করা চুলের জন্য এই ধরনের শ্যাম্পু খুবই কার্যকরী। এই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের কালার অনেকদিন পর্যন্ত থাকবে। এরই সঙ্গে বিকল্প হিসেবে কালার স্পেসিফিক শ্যাম্পুও ব্যবহার করতে পারেন যেটি চুলের সঠিক রং ধরে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

১)  চুলের কালার বজায় রাখার জন্য সালফেট মুক্ত হেয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। এতে চু্লের পুষ্টি বহুদিন পর্যন্ত বজায় থাকবে।

২)  যাদের চুলের রং গাঢ় তাদের শাইন এনহ্যান্সিং স্টাইলিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।

৩)  যারা চুল কালার অথবা হাইলাইট করাচ্ছেন তাদের এটাও জেনে রাখা জরুরি যে, চুলের এই শাইন এবং স্বাস্থ্য কতদিন পর্যন্ত বজায় থাকবে। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে চুলের কতটা যত্ন নেওয়া হচ্ছে তার উপর।

৪)  হাইলাইটেড চুলের জন্য কতটা যত্ন নেওয়া জরুরি সেটা বুঝতে হলে কয়েকটা ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে যেমন –

ক) আপনার চুল কত তাড়াতাড়ি বাড়ে?

 উত্তর – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল মাথায় চুলের বৃদ্ধি হয় ৫ মিমি থেকে ১০ মিমি পর্যন্ত। চুলের বৃদ্ধি সাধারণত নির্ভর করে আপনার মেটাবলিজম, আহার এবং মাথায় কী প্রোডাক্ট লাগাচ্ছেন তার উপর।

খ) প্রাকৃতিক চুলের রঙের থেকে কালার করা চুলের তফাত কী?

উত্তর – চুলের জন্য রং বাছবার আগে কয়েকটা জরুরি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত –

ডিপ কন্ডিশনিং

 হাইলাইটেড করা চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং করানো খুব দরকার কারণ হাইলাইটেড চুলে ছিদ্রসংখ্যা অসম্ভব বেড়ে যায়। সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও চুল কন্ডিশন করার দরকার পড়ে। চুলকে হাইড্রেট করতে এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ডিপ কন্ডিশনিং করানো খুব জরুরি। এতে চুল উজ্জ্বল এবং সুন্দর দেখাবে।

জোজোবা অয়েল-যুক্ত কন্ডিশনার, ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত দু’বার শ্যাম্পু করার পর এটি চুলে লাগানো যেতে পারে।

ট্রিমিং

 চুল হাইলাইট করাবার সময় অত্যাধিক কেমিক্যালস-এর প্রয়োগের ফলে চুল অত্যন্ত রুক্ষ হয়ে পড়ে এবং চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। চুল মাঝখান থেকে ভেঙে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। চুল ওঠা এবং ভঙ্গুরতা রোধ করার জন্য ৮ থেকে ১০ সপ্তাহে একবার চুল ট্রিম করানো উচিত। এতে চুলের স্বাস্থ্য বজায় থাকবে। চুলের গোড়া শক্ত করার জন্য ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে ল্যাভেন্ডর এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগানো যেতে পারে।

নিয়ম মানা

 চুলের উপর ধুলো ময়লা, রোদ, জলের প্রভাব পড়ে খুব তাড়াতাড়ি। এর ফলে হাইলাইট করা চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চুলের রং এর কারণে হালকা হতে থাকে এবং চুলের আর্দ্রতা শুষে নিতে আরম্ভ করে। চুল রুক্ষ এবং নির্জীব হয়ে পড়ে। সুতরাং চুল জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেওয়ার পর, চুলকে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচাবার জন্য বাইরে বেরোবার আগে চুলে জোজোবা অয়েল লাগান।

সুরক্ষা

হিটেড স্টাইলিং টুলস্ যেমন স্ট্রেটনার, ব্লো ড্রায়ার, কার্লিং আয়রন-এর প্রয়োগে হাইলাইটেড চুল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সুতরাং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যধিক তাপমাত্রা থেকে চুলকে সুরক্ষা প্রদান করা বাঞ্ছনীয়। চুলে অর্গ্যান অয়েল লাগান। অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে এটি চুল সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।

আফটার কেয়ার টিপ্স

 ফয়েল হাইলাইটিং ট্রিটমেন্টের পর চুলের রং টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন চুলের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন তেমনি চুলকে মজবুত, উজ্জ্বল এবং চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে চুলে পুষ্টির জোগান দেওয়ারও প্রয়োজন আছে।

ভেজা চুলে ক্যাস্টর অয়েল মালিশ করুন এবং তোয়ালে দিয়ে চুলটা ১০ মিনিট জড়িয়ে রেখে তারপর চুল ধুয়ে ফেলুন। ক্যাস্টর অয়েল চুলে আর্দ্রতা বাড়িয়ে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল বানাতে সাহায্য করবে।

স্টাইলিং টিপ্স

 হিট স্টাইলিং টুলস্-এর প্রয়োগ যতটা কম করা যায় ততটাই ভালো। যদি একান্তই এই উপকরণগুলি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তাহলে মাথায় হিট প্রোটেক্টেড স্প্রে করে নিতে পারেন।

ওয়াশিং টিপ্স

 ক্লোরিন – যদি সাঁতার কাটতে যান তাহলে পুলে নামার আগে চুলে কন্ডিশনার অথবা জোজোবা অয়েল লাগান। তাহলে পুলের ক্লোরিন-যুক্ত জল চুলের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।

জলের তাপমাত্রা – ঠান্ডা অথবা ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে চুল ধোওয়া উচিত কারণ গরমজল চুলের কালার তুলে দিতে পারে।

শ্যাম্পু লাগাবার ফ্রিকোয়েন্সি – চুলে রোজ শ্যাম্পু করলে চুলের ক্ষতি হয়। যখন প্রয়োজন হবে তখনই শ্যাম্পু করা উচিত এবং সোডিয়াম লরেল সালফেট মুক্ত শ্যাম্পুই ব্যবহার করা উচিত। চুল কালার করা হোক বা না হোক, প্রাকৃতিক শ্যাম্পুই চুলের জন্য সব থেকে ভালো।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...